প্রতীকী ছবি।
প্রযুক্তি আছে। দক্ষতা আছে। এবং আছে সস্তায় কাজ করার ক্ষমতা। মহাকাশ বাণিজ্যে অন্য দেশগুলির সঙ্গে টক্করে নামতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর দরকার ছিল একটি সাহায্য করতে পারে এমন একটি পেশাদার সংস্থার। যা তাদের পণ্য ও পরিষেবার বিপণন করতে পারবে। দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ তাঁর প্রথম বাজেটে এমনই একটি সংস্থা তৈরির প্রস্তাব রাখলেন। এর নাম হবে ‘নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড’। সংক্ষেপে এনএসআইএল।
এক বারেই মঙ্গলের কক্ষপথে রকেট পাঠিয়েছে ভারত। মহাকাশে উপগ্রহ ধ্বংসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। চাঁদে দ্বিতীয় বার যান পাঠানোর প্রস্তুতি প্রায় সারা। নিজেদের রকেটে দেশের নাগরিকদের অন্তরীক্ষে পাঠানোর জন্যও তৈরি হচ্ছে। ২০৩০ নাগাদ একটি নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন গড়ারও লক্ষ্য রয়েছে ভারতের।
এই সবের মাধ্যমে মহাকাশ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ক্ষমতা, সাফল্যের হার এবং ধারাবাহিকতা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত গোটা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। আমেরিকার মতো শক্তিমান দেশগুলির কাছে সবচেয়ে ঈর্ষণীয় যেটা, তা হল ভারত এই কাজগুলি করছে অনেক কম খরচে। আর এটাই নরেন্দ্র মোদীর কাছে মহাকাশ বাণিজ্যে ভারতের ‘ইউএসপি তথা ইউনিক সেলিং পয়েন্ট’। ভারতকে এই ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগী হিসেব তুলে ধরার কাজটি শুরু করে দিলেন দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই। নির্মলার কথায়, ‘‘ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার সময় এসেছে।’’
এনএসআইএলের কাজ কী হবে? সহজ কথায়, যথা সম্ভব লাভে ভারতের মহাকাশ পণ্য-পরিষেবা বিক্রি করবে। বেশ কিছু দিন ধরেই নিজেদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাচ্ছে ভারত। সেটা অ্যান্টরিক্স নামে ইসরোর একটি শাখার মাধ্যমে হয়ে এসেছে। এনএসআইএল এ বার বাণিজ্যিক ভাবে অন্য দেশের উপগ্রহ মহাকাশে পৌঁছে দেবে ভারতের এসএসএলভি-র মাধ্যমে। পাশাপাশি দেশের মহাকাশ পণ্য বিক্রি, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো বিষয়ও সামলাবে। আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী কতটা কি উৎপাদন করা দরকার, তা নিয়েও সমন্বয় রাখবে ইসরো ও মহাকাশ দফতরের অন্য সব সংস্থার সঙ্গে।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন আজ বলেন, ‘‘ভূসমলয় (সিনক্রোনাইজড) উপগ্রহ পাঠানোর রকেট এসএসএলভি-র উৎপাদন এক লাফে বেড়ে যাবে। মাসে দু’-তিনটি করে তৈরি করতে হবে বলে আশা করছি। পোলার স্যাটেলাইট পাঠানোর যান পিএসএলভি-র উৎপাদনও বাড়াতে চাই আমরা।’’ শিবন জানাচ্ছেন, এ বার বিপণন হবে ইসরোর তৈরি প্রযুক্তি, বিভিন্ন যন্ত্র ও রাসায়নিকেরও। বাড়বে ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা। মহাকাশ দফতর ও ইসরোর ছাড়পত্র নিয়ে বেসরকারি সংস্থাও তৈরি করতে পারবে ছোট ছোট রকেট। ইসরো ইতিমধ্যেই দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলির হাতে ‘লিথিয়াম-আয়ন সেল’ প্রযুক্তি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোবাইল, ল্যাপটপ— সবেতেই এই সেল ব্যবহার হয়। উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিদেশি সংস্থাকে বিক্রি করে ভারত। এই সব ক’টি ক্ষেত্র এ বার এক ছাতায় এনে ব্যবসা করবে এনএসআইএল।