—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা। অমিত শাহ বলছেন আর এক। বাকি মন্ত্রীদের আবার ভিন্ন সুর। সংসদের ভিতরে এক, বাইরে আর এক, সাক্ষাৎকারে একেবারে উল্টো। এ দিকে সঙ্ঘ ছুটছে নিজের তালে। এই অবস্থায় সরকার যা-ই করুক, বিশ্বাস করছেন না অনেকেই। বিরোধীরা তো নয়ই।
আজ যেমন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হল সকালে। দুপুরে মন্ত্রীরা জানাতে এলেন, জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) হবে জনগণনার সঙ্গেই। পীযূষ গয়ালের পাশে বসে প্রকাশ জাভড়েকর বললেন, ‘‘কোনও বায়োমেট্রিক, আধার বা প্রমাণ দিতে হবে না। নিজে থেকে যা তথ্য দেওয়ার দেবে জনতা।’’
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বললেন, ‘‘কারও আধার কার্ড থাকলে, দিতে কী অসুবিধা?’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এনপিআর-এর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের প্রমাণ নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনোদ বনশল ধন্যবাদ জানালেন নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। বললেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীর সমস্যা ঘুচবে এনপিআরে।’’ ঠিক যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিরোধীরা। এনপিআর আসলে এনআরসি-রই প্রথম ধাপ। যে কথা সংসদে মোদী সরকারের মন্ত্রী লিখিত আকারে বলেছেন। সরকারি নথিতেও তা আছে।
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিরেণ রিজিজু সংসদকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, এনপিআর-এর তথ্য দিয়েই এনআরসি হবে। তা তুলে ধরে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘এনপিআরই এনআরসি। মোদী সরকার আর কত মিথ্যা বলবে? মানুষকে কত বিভ্রান্ত করবে?’’
মনমোহন সিংহের জমানায় যখন জনগণনা হয়েছিল, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন অজয় মাকেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এনপিআর-এর সঙ্গে নাগরিকত্ব জুড়িনি। কিন্তু এখন সরকারের মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মোদী শাহকে মিথ্যাবাদী বলছেন, শাহ মোদীকে। ফলে কাউকে আর ভরসা নেই।’’ বিরোধীরা জানেন, কোনও কিছুর ঢাক পেটানোয় ‘সেরা’ জুটি মোদী-শাহ। কিন্তু সেই শাহই আজ বলছেন, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইনটি বোঝানোর ক্ষেত্রে যোগাযোগের ত্রুটি ছিল।’’ প্রশ্ন উঠছে, বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখতেই কি এই ইচ্ছাকৃত ‘ত্রুটি’?
কংগ্রেস নেতা পবন খেরার কথায়, ‘‘সরকার যদি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী না-আনত, শাহ যদি সদর্পে বারবার এনআরসির কথা না-বলতেন, তবে হয়তো এনপিআর এবং জনগণনা নিয়ে কারও অবিশ্বাসের সুযোগ থাকত না। কিন্তু এখন সরকারের ‘নীতি’ নয়, ‘নিয়ত’ (উদ্দেশ্য)-ই প্রশ্নের মুখে। এই সরকারকে কেউ আর বিশ্বাস করছে না।’’ ঘটনাচক্রে আজই শাসক শিবিরের ‘নিয়ত’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী-শাহের রাজ্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী, হরিয়ানার বিধায়ক লীলারাম গুর্জররা। রূপাণী বলেছেন, ‘‘মুসলিমদের যাওয়ার জন্য দেড়শোটা দেশ আছে। হিন্দুদের আছে শুধু ভারত। তাঁরা যদি ফিরে আসতে চান, তবে সমস্যাটা কোথায়?’’ নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ হাওয়ার পরই রূপাণীর রাজ্যে ছ’জন পাক হিন্দুকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। আর লীলারাম বলেছেন, ‘‘এটা গাঁধীর নয়, মোদী-শাহের হিন্দুস্থান। ইশারা মিললে এক ঘণ্টায় সাফ করে দেব।’’