ধোঁয়াশা সরাতে অ্যান্টি স্মগ গান। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
পরিবেশ রক্ষা করতে সুপ্রিম কোর্ট শুধু সবুজ বাজি পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বাজির ধোঁয়ায় কার্যত দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গিয়েছে, দেশের ১৩৮টি শহরের মধ্যে ৩৩ শহরে বায়ুর গুণমান খুব খারাপ বা মারাত্মক খারাপ গোত্রের। অর্থাৎ প্রায় ২৪ শতাংশ শহরেই বায়ু বিষিয়ে গিয়েছে। ওই ৩৩টি শহরের অধিকাংশই উত্তর ভারতে অবস্থিত। শনিবার বিকেলের তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পর্ষদ ওই তালিকা প্রকাশ করেছে।
পরিবেশকর্মীদের একাংশের মতে, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রাতের তথ্যের ভিত্তিতে বিচার করলে ৩৩টির বেশি শহরকেই খুব খারাপ বা মারাত্মক খারাপ তালিকায় রাখতে হত। প্রসঙ্গত, ১৩৮টি শহরের মধ্যে এ রাজ্যের ৬টি শহর রয়েছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর এবং হাওড়ার বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’ গোত্রে রয়েছে। কলকাতা, শিলিগুড়ি, আসানসোল এবং হলদিয়ায় বাতাসের মান ‘মাঝারি’ গোত্রে ছিল বলে জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকা অনুযায়ী, দিল্লি, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ গোরক্ষপুর, বুলন্দশহরের মতো উত্তরপ্রদেশের শহরগুলিতে প্রাণান্তকর অবস্থা। হরিয়ানার হিসার, পানিপথ, সোনিপথের অবস্থাও ভাল নয়। নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো রুখতে ওই রাজ্যগুলির সরকার আদৌ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দিল্লির অবস্থা তো ভয়াবহ। দেওয়ালির পর দু’দিন ধরে বিষাক্ত কালো ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে রয়েছে রাজধানী। বায়ু মান সূচক (একিউআই)-এর মান ৩০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত হলে (মেরুন), সেই বাতাসকে ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়। শুক্রবার দিল্লিতে এর মান বিপজ্জনক স্তরকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল (৬১৭)। শনিবার সকাল ৮টায় দিল্লির বায়ু মান সূচক হয় ৪৪৯। অর্থাৎ এ দিনও ‘বিপজ্জনক’ বাতাসে বন্দি কাটিয়েছে দিল্লি। সকালে যাঁরা সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা সামনের রাস্তা দেখতে পাচ্ছিলেন না প্রায়। রাজধানীর লাগোয়া নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গুরুগ্রাম, গাজ়িয়াবাদে এ দিন একিউআই ছিল দিল্লির চেয়েও বেশি। দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের কার্ডিয়োলজির অধ্যাপক অরুণ মহান্তির কথায়, “হৃদ্রোগ ও ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে যাঁদের, তাঁদের পক্ষে এটা মারাত্মক।” তিনি জানান, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশুর হাঁপানি রয়েছে। তাদের পক্ষে এটা অত্যন্ত বিপদের। সদ্য কোভিড-১৯ থেকে যাঁরা সেরে উঠেছেন, তাঁদের পক্ষেও খুবই ক্ষতিকর এই বাতাস।
পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত সবুজ বাজিতে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু দেশের কোথাও আদৌ সবুজ বাজি উৎপাদন এবং বিক্রি হয় কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। কালীপুজো এবং দীপাবলিতে বায়ুদূষণ যে ভাবে বেড়েছে তাতে এটা স্পষ্ট, সবুজ বাজি পোড়ানো হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। সুপ্রিম কোর্ট যে বাজিগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল, সেগুলি বন্ধ করতে বেশির ভাগ রাজ্যের প্রশাসনের তরফে সক্রিয় পদক্ষেপ করা হয়নি বলেও অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, উত্তর ভারতের গেরুয়া শিবিরের অনেকেই বাজির সপক্ষে মুখ খুলেছেন। তা সামনে রেখেই প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, বাজি রুখতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনই বঙ্গেও বাজি রুখতে আরও সদিচ্ছার প্রয়োজন। কারণ, শুক্রবার দেশে দূষণের সেরা ৩৩-এ না এলেও কলকাতা, হাওড়া, শিলিগুড়ির বায়ুদূষণ সূচক স্বস্তিদায়ক নয়, জানান পরিবেশবিদেরা।
উত্তর ভারতের দমবন্ধকর অবস্থা নিয়ে পরিবেশবিদদের একাংশের মত, উত্তর ভারতে যেমন প্রচুর বাজি পুড়েছে, তেমনই উত্তুরে বাতাসের জেরে ঠান্ডাও পড়েছে। তাই বাজির ধোঁয়া ঘনীভূত হয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। তা সহজে কাটছে না। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এখনও সে ভাবে ঠান্ডা না-পড়ায় পরিস্থিতি ততটা বিগড়োয়নি।