প্রতীকী ছবি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলায় চোখ রেখে ধোঁয়াশা ছাড়া প্রায় কিছুই আজ দেখতে পাননি দিল্লির বাসিন্দারা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও দিল্লি সরকারের বারংবার আবদন উপেক্ষা করে রাজধানীর বহু এলাকাতেই কাল দেওয়ালি উদ্যাপন হয়েছে বেলাগাম বাজি পুড়িয়ে। বিজেপি এতে উৎসাহ জুগিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই। তাঁর বক্তব্য, “বহু সংখ্যক মানুষ বাজি পোড়াননি। তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ। তবে কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাজি পুড়িয়েছেন। বিজেপি তাদের দিয়ে এটা করিয়েছে।”
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, আলো-বাজির এই উৎসবের কারণে দিল্লির বায়ু মান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) আজ সকালে এক লাফে বেড়ে হয় ৬১৭। সারা দিনের সরকারি হিসেবে তা ৫৩১। যার অর্থ, এই মুহূর্তে দিল্লির সকলে এখন মারাত্মক দূষিত তথা বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন। বেসরকারি নজরদারি সংস্থার মতে, দিল্লির কিছু অংশে এই সূচক উঠেছিল ৯৯৯-এ!
বায়ু মান সূচকের মান শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা (সবুজ) শ্বাস নেওয়ার পক্ষে ভাল। ৫১-১০০ হলে (হলুদ) মাঝারি। ১০১-১৫০ হলে (কমলা), যাঁদের বিশেষ স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে, সেই সংবেদনশীল অংশের মানুষের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর। বায়ু মান সূচক ১৫১-২০০ হলে তা (লাল) সকলের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর। ২০১-৩০০ হলে (পার্পল/বেগুনি) খুবই অস্বাস্থ্যকর। ৩০১-৫০০ হলে (মেরুন), সেই বাতাস বিপজ্জনক।
দূষণ-রোধে ব্যবস্থা দিল্লির রাস্তায়। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
বায়ু মান সূচকের খাতায় চোখ রাখলে এটা স্পষ্ট, বায়ু দূষণ নিয়ে যাবতীয় চর্চা-আলোচনা-হুঁশিয়ারি কার্যত জলে গিয়েছে দেওয়ালিতে। গত পাঁচ বছরে কিছুই শেখেনি দিল্লি। বাজি পোড়ানোর ধুম শুরুর আগে, বুধবারই দিল্লির বাতাস ছিল বিপজ্জনক স্তরে (একিউআই ৩৮৬)। এক রাতের বাজি পোড়ানোর মাশুল হিসেবে বিপজ্জনকের চেয়েও এক ধাপ উপরে গিয়ে রীতিমতো বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন দিল্লিবাসী।
একই রকম খারাপ অবস্থা দিল্লির লাগোয়া এলাকাগুলিতে। আজ সকালে বায়ু মান সূচক নয়ডায় ছিল ৪৬৬, গাজ়িয়াবাদে ৪৫০, ফরিদাবাদে ৪৬০ ও গুরুগ্রামে ৪৭৮। নয়ডা ও গাজ়িয়াবাদ উত্তরপ্রদেশে। ফরিদাবাদ ও গুরুগ্রাম হরিয়ানায়। দু’টিই বিজেপি শাসিত রাজ্য। ওই দুই রাজ্যের সরকারও দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের মতোই বাজি পোড়ানোর উপরে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সূচকেই প্রমাণ, মানুষ তাতে কান দেননি। রাজস্থানে আজ বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দু’দিন আগেও রাজধানী জয়পুরে একিউআই ছিল ১৪০। আজ সকালে তা হয় ৩৪০-র বেশি। শুধু বাজি নয়, ফসলের গোড়া পোড়ানোর দায়ও কম নয় রাজধানীর বায়ু দূষণে। গত শনিবার পর্যন্ত হিসেব, দিল্লি এলাকায় বায়ু দূষণের জন্য ৪০ শতাংশ দায়ী লাগোয়া রাজ্যগুলিতে কৃষকদের এই রীতি।
দেওয়ালির পর দিন দিল্লির বায়ু মান সূচক ২০১৭-তে ছিল ৩৯১, ২০১৮-তে ৬৪২, ২০১৯-এ ৩০৬ ও ২০২০-তে ৪১৪। গত বছর দিল্লির নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় এই সূচক ৪৬৮ পর্যন্ত উঠেছিল। পরিবেশবিদদের একাংশ এই ভেবে স্বস্তি খুঁজছেন যে, দিল্লির এ বারের পরিস্থিতি অন্তত ২০১৭-র চেয়ে কিছুটা ভাল। কেন্দ্রীয় পৃথ্বী মন্ত্রকের ‘সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ’ তথা সফর-ইন্ডিয়া পোর্টালের ও অন্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী রবিবারের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা নেই।
মানুষের স্বাস্থ্য বিপন্ন করে উৎসব চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেও সুপ্রিম কোর্ট দেওয়ালির আগে বাজির উপরে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। জানিয়েছিল, বেরিয়াম সল্ট রয়েছে, এমন বাজি পোড়ানো চলবে না। মামলার পরের শুনানি হবে ৩০ নভেম্বর।