‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির পোস্টার (বাঁ দিকে)। অভুক্তদের জন্য খাবার তৈরি করেন কেরলের এই মহিলা (ডান দিকে)। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।
কথায় আছে ‘অতিথি দেব ভবঃ’। তবে তাঁরা কেউ ‘অতিথি’ নন। সকলেই অচেনা। সেই নাম-না-জানা মানুষগুলোর মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে রোজ রাঁধেন কয়েকশো মহিলা। ঘরের লোকটির জন্য তো ওই গৃহিণীদের রোজ রাঁধতে হয়ই। সেই তাঁরাই নিজের সংসারের ভোজন পরিবেশনের পাশাপাশি বহির্জগতের আর চার-পাঁচটা মানুষের জন্যও ভাবেন। আর এ ভাবে রোজ ৪০ হাজার মানুষের ‘নারায়ণ সেবা’ করছেন কেরলের ওই মহিলারা। যাকে বলে এ এক অন্য ‘কেরালা স্টোরি’।
২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই উদ্যোগ। অভুক্তদের আহারের ব্যবস্থা করার এ হেন উদ্যোগের নেপথ্যে এক কাহিনিও রয়েছে। ‘দ্য ইন্ডিয়া টুডে’ সূত্রে সেই গল্পই প্রকাশ্যে এসেছে। কেরলের কাট্টাক্কাডার বাসিন্দা সৌম্যা। রোজ ভোরে উঠে স্বামী এবং দুই সন্তানের জন্য খাবার তৈরি করেন। এক দিন, বাড়তি খাবার বানিয়েছিলেন। অতিরিক্ত খাবার নিয়ে কী করবেন, তা কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলেন না। তার পরই বাড়তি ভাত, সম্বর, থোরান প্যাকেটে ভরে দুই যুবককে দিয়েছিলেন তিনি। বাইকে করে যাচ্ছিলেন ওই দুই যুবক। এমন নয় যে, ওই দুই যুবককে সৌম্যা চিনতেন। সেই শুরু। তার পর থেকেই শুরু হয় ‘হৃদয়পুরম পথিচুরু’। আর এ ভাবেই তৈরি হয়েছে আরও একটি ‘কেরালা স্টোরি’। যে কাহিনি প্রচারের আড়ালেই থেকেছে।
‘পথিচুরু’ শব্দের অর্থ খাবারের পার্সেল। এখন রোজ ৪০ হাজার মানুষকে খাওয়াচ্ছেন ওই মহিলারা। ২০১৭ সালে তৈরি করা হত ৩০০টি খাবারের প্যাকেট। সেই সংখ্যা আজ হাজার পার করেছে। অভুক্তের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার এ হেন উদ্যোগ শুরু করেছিল সিপিআইএমের যুব শাখা ডিওয়াইএফআই। সেটা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। তিরুঅনন্তপুরম মেডিক্যাল কলেজে ৩০০টি খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল। বামশাসিত কেরলে এ হেন উদ্যোগের কথা মনে করিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিনের’ কথা। ২০২০-র মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশ জুড়ে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কথা মাথায় রেখে সিপিএমের যাদবপুরের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই ক্যান্টিন।
ইন্ডিয়া টুডে’কে ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সিপিআইএমের রাজ্যসভার সাংসদ এএ রহিম বলেছেন, ‘‘ছ’বছর পর আমরা এখন ১৪টি জেলার ৫০টি হাসপাতালে রোজ প্রায় ৪০ হাজার খাবারের প্যাকেট দিচ্ছি।’’ তবে এই পরিষেবার জন্য কোনও ‘কমিউনিটি কিচেন’ নেই। এই ৪০ হাজার খাবারের প্যাকেট তৈরি করছেন বিভিন্ন গৃহিণীরা। বিভিন্ন বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অতিরিক্ত খাবার তৈরির জন্য অনুরোধ করেন ডিওয়াইএফআই কর্মীরা। তাঁরাই সেই খাবার সংগ্রহ করে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পাঠান। অভিলাষ নামে ডিওয়াইএফআইয়ের এক কর্মী জানিয়েছেন, প্রবীণ দম্পতিরাও বাড়তি খাবার তৈরি করে দিচ্ছেন। কেরলের মহিলাদের এ হেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। কেরলের এই কাহিনি নজর কেড়েছে অনেকের।
চলতি বছরের ৫ মে মুক্তি রুপোলি পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এই ছবি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কেরলের বেশ কয়েক জন মহিলাকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তাঁরা নিখোঁজ হয়ে যান, যোগ দেন আইসিস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে। ছবির এই গল্প নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে সেই নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আবার, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই ছবিকে করমুক্ত করা হয়েছে। এই ছবি ঘিরে বিতর্কের মধ্যেই কেরলের মহিলাদের সেবার এই কাহিনি আলাদা করে নজর কাড়ল।