গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
জম্মু ও কাশ্মীরকে ‘বিশেষ অধিকার’ দেওয়া ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে প্রত্যাহার হবে না ৩৭১ অনুচ্ছেদ। সুপ্রিম কোর্টে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এ কথা জানাল কেন্দ্র। চার বছর আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ এমনকি, পূর্ণ রাজ্যের তকমা কেড়ে নেওয়ার পরে উত্তর-পূর্বেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল ৩৭১ অনুচ্ছেদ নিয়ে। সে সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বিষয়ে আশ্বাসবাণী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিরোধীরা কেবল কাশ্মীর নিয়ে প্রতিবাদই জানাননি, পরে ৩৭১ অনুচ্ছেদও লোপ পাবে বলে প্রচারও চালিয়েছেন। উত্তর-পূর্বকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে।’’
সরকারের অবস্থান ব্যাখা করতে গিয়ে শাহ জানিয়েছিলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল অস্থায়ী অনুচ্ছেদ। কিন্তু ৩৭১ স্থায়ী অনুচ্ছেদ। তাই ৩৭১(এ) থেকে ৩৭১(জে) পর্যন্ত সবকটি ধারা বজায় থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বস্তুত, শীর্ষ আদালতে ৩৭০ ধারা বিলোপ সংক্রান্ত মামলায় ক্ষেত্রেও এই যুক্তি দিয়ে কেন্দ্র বলেছে, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল ‘অস্থায়ী সংস্থান’ (টেম্পোরারি প্রভিশন)। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদী সরকার। অর্থাৎ নির্দেশনামায় রাষ্ট্রপতি সই করার পরের মুহূর্ত থেকেই রদ হয়ে যায় ৩৭০ ধারা। এই ধারার অধীনেই ৩৫(এ) ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডে থেকেও জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন, খারিজ হয়ে যায় তা-ও।
অন্য দিকে, ৩৭০ ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের মামলার আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি, জওহরলাল নেহরুর জমানায় সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত অংশ ১২ বলছে— কেবল মাত্র ‘কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’ (পরে রাজ্য সরকার) সম্মত হলে তবেই সংবিধানের কোনও ধারার সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনও সংশোধন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য হতে হলে ৩৭০(১) ধারা মতে রাজ্য সরকারের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি প্রয়োজন। নির্বাচন সংক্রান্ত অংশ ১৫ বলছে— রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন রাজ্যের নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে ৩৭০ ধারা বাতিল করতে হলে সংবিধানসভা বা বিধানসভার সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু মোদী সরকারের আমলে ৩৭০ বাতিলের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি শাসনে রাজ্যপালকে কোনও অবস্থাতেই ‘স্থানীয় সরকার’ বলা যায় না বলে আবেদনকারী পক্ষের দাবি। তাঁদের মতে রাজ্যপাল জনপ্রতিনিধিত্বের প্রতীক নন, এ ক্ষেত্রে ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা বাতিলের ঘটনা সাংবিধানিক ভাবে বেআইনি। পাশাপাশি ১৯৫৭ সালের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা আর কার্যকর ছিল না বলে কেন্দ্র যে যুক্তি দিয়েছিল, তা কার্যত খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচরাপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ মঙ্গলবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, ‘‘এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।’’ এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, ১৯৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধান বলবৎ হওয়া এবং সংবিধান সভার মেয়াদ শেষের পর ৩৭০ ধারা সেখানে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।