স্মরণ: নেহরু জন্মদিবসে শান্তিবনে সনিয়া। ছবি পিটিআই।
কাশ্মীরের সমস্যা হোক বা চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ, অর্থনীতি হোক বা বিদেশনীতি, মোদী সরকার তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দেশের যাবতীয় সমস্যার জন্যই জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করে থাকেন।
আজ নেহরুর জন্মদিনে সংসদের সেন্ট্রাল হলে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধার্ঘ জানানোর অনুষ্ঠানে মোদী সরকারের কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রীর দেখা মিলল না। কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছে, এর থেকে ভয়াবহ আর কী হতে পারে?
সেন্ট্রাল হলে যে সব রাষ্ট্রনেতাদের তৈলচিত্র রয়েছে, সেখানে তাঁদের জন্মবার্ষিকী পালন হয়। সেই মতো আজ নেহরুর জন্মবার্ষিকী পালনেরও আয়োজন হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানে আজ এক অস্বাভাবিক ছবি দেখা গিয়েছে। লোকসভার স্পিকার গরহাজির। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান গরহাজির। এক জন মন্ত্রীও হাজির ছিলেন না। এর থেকে ভয়াবহ কিছু হতে পারে?”
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী সকালে শান্তিবনে গিয়ে নেহরুর স্মৃতিস্মারকে শ্রদ্ধা জানান। তারপরে সেন্ট্রাল হলে যান। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে, আনন্দ শর্মার মতো কংগ্রেস নেতারা সেন্ট্রাল হলে হাজির ছিলেন। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী দূরের কথা, বিজেপির কোনও প্রথম সারির নেতারও দেখা মেলেনি। লোকসভার সচিবালয় সূত্রের ব্যাখ্যা, স্পিকার ওম বিড়লা গত দু’বছর নেহরুর জম্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। এ দিন তিনি দিল্লিতে ছিলেন না। কিন্তু দিল্লিতে না থাকলেও রাজস্থান বিধানসভায় শিশু দিবস উপলক্ষে বিধানসভার শিশুদের অধিবেশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও এ দিন অন্ধ্রপ্রদেশে ছিলেন।
সরকারি সূত্রের দাবি, ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা কেউ না গেলেও ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভানুপ্রতাপ সিংহ বর্মা সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রী বা বিজেপি নেতারা নেহরুকে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন না, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। কংগ্রেস নেতারা একে শিষ্টাচারের অভাব বলে আখ্যা দিয়েছেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, নেহরুর মতাদর্শের সঙ্গে বিজেপির মতাদর্শের সংঘাত রয়েছে। তা বলে তাঁরা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে কী ভাবে অশ্রদ্ধা করতে পারেন?
আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মন্তব্য করেছেন, ১৯৪৭-এ নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতা থাকলে ভারত সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ হত। ভারত এখন তাঁর জন্যই বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৪৭-এ উনি থাকলে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ, সবচেয়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ হত। অধীরের মন্তব্য, “আসলে নরেন্দ্র মোদী নিজেকে সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে চান। তাই তাঁর দল নেহরুর উত্তরাধিকার, তাঁর অবদান, স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু দেশের নেতা হলে হৃদয়টাও বড় হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদী তা দেখাতে পারছেন না।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য এ দিন টুইটে নেহরুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রবীণ মন্ত্রীদের মধ্যে রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ীও নেহরুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন টুইটে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এমন কোনও টুইট করেননি।