নীতীশ কুমার
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর দল জেডিইউয়ের সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। ওই পদে তিনি আনলেন দলের রাজ্যসভার সাংসদ রামচন্দ্র প্রসাদ সিংহকে। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আজ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েক দিন আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বিহারে জেডিইউয়ের জোট বিজেপির সঙ্গে। অরুণাচলে নীতীশের দলের ছ’জন বিধায়ক সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে জোট সংক্রান্ত বিষয়ে বিজেপির সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব তৈরি করলেন নীতীশ। মন দিতে চান মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে।
অরুণাচলের ‘অপমানের’ জবাব দিতে বিহারে যদি বিজেপির সঙ্গ ছাড়েন নীতীশ, তা হলে তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে তৈরি আরজেডি। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ‘আত্মসম্মানের’ প্রসঙ্গ টেনে এনে এ ভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। নীতীশ অবশ্য গদি রাখবেন না কি সম্মান, তা নিয়ে এখনও উচ্চবাচ্য করেননি।
অরুণাচলে জেডিইউয়ের সাত বিধায়কের মধ্যে ছ’জনকেই নিজেদের দলে টেনে নিয়েছে বিজেপি। বিহারে যাদের সঙ্গে মিলে সরকার চলছে, অরুণাচলে সেই দলেরই ঘরভাঙার ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে নীতীশ কুমার এমনকি বিহার বিজেপির নেতারাও। সুযোগ বুঝে বিহারের শাসক জোটের সংঘাতকে আরও উস্কে দিতে মাঠে নেমেছে আরজেডি, কংগ্রেসের মতো দল। আরজেডির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি শিবানন্দ তিওয়ারি এই ঘটনাকে ‘শরিককে অপমান করতে বিজেপির রণকৌশলের অঙ্গ’ হিসেবেই তুলে ধরেছেন। এর পিছনে নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমারের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। শিবানন্দের দাবি, এক যুগ আগে পটনায় বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠক চলাকালীন সেই দলের নেতাদের জন্য ডাকা নৈশভোজ বাতিল করে দিয়েছিলেন নীতীশ। তিওয়ারি বলেন, ‘‘নীতীশ তখন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। মোদী সে সব ভুলে যাওয়ার লোক নন।’’
আরজেডিতে যোগ দেওয়ার আগে নীতীশের দলের নেতা ছিলেন শিবানন্দ। তাঁর মতে, নীতীশ কুমারকে কোণঠাসা করতে বিজেপি যা করছে, তা একটি দীর্ঘকালীন পরিকল্পনার অঙ্গ। প্রথমে বিধানসভা ভোটে নীতীশকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। চিরাগ পাসোয়ানকে দিয়ে বারবার তাঁকে অপমান করার চেষ্টা হয়েছে। চিরাগের লোক জনশক্তি পার্টি জেডিইউয়ের ভোট কেটেছে। এমনকি বিজেপির অনেক বিক্ষুব্ধ নেতা চিরাগের দলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটে নীতীশকে কোণঠাসা করতে সফল হয়েছে বিজেপি। আর এ বার তাঁকে অপমান করতে শুরু করেছে মোদীর দল। শিবানন্দের প্রশ্ন, ‘‘অরুণাচলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপির কোনও সমস্যা নেই। তা হলে জেডিইউয়ের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিল কেন তারা?’’
বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেত্রী রেণু দেবী অবশ্য দাবি করেছেন, অরুণাচলে নীতীশের ঘর ভাঙতে চায়নি তাঁর দল। নীতীশের দলের বিধায়কেরাই বিজেপিতে যোগ দিতে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। সেই কারণেই দলত্যাগ করেছেন তাঁরা। রেণু দেবীর দাবি, অরুণাচলের ঘটনা বিহারের শাসক জোটের সম্পর্কের উপরে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
দলত্যাগ নিয়ে বিজেপির এই সহজ, সরল দাবি অবশ্য কোনও ভাবেই মেনে নিচ্ছে না আরজেডি কিংবা কংগ্রেসের নেতারা। অরুণাচলের ঘটনা নিয়ে লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী টুইটারে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘বিজেপি সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যান। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুখ্যাত পশু শিকারিরা যেমন, বিজেপিও তেমনি শিকার করার দক্ষতা অর্জন করেছে।’’ আরজেডি নেতা তিওয়ারি এক কদম এগিয়ে বলেছেন, ‘‘নীতীশকে এখন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি সম্মান বাঁচাবেন না কি ক্ষমতার জালে আটকে থাকবেন, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’’ আরজেডি নেতা বলেন, ‘‘নীতীশ যদি এনডিএ ছাড়েন, তা হলে আমরা বিজেপির হাত ধরে সরকার গড়ার চেষ্টা করব, এমন কথা ভাবার কোনও কারণ নেই। আমরা শুরু থেকেই বিজেপির বিরোধিতা করে আসছি। নীতীশও কিছু দিনের জন্য আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন।’’