পরিদর্শন: বালতাল প্রান্তে জোজি লা সুড়ঙ্গের কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
গলওয়ানের সংঘর্ষের স্মৃতি এখনও টাটকা। লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হলেও, এখনও একাধিক এলাকায় সীমান্তে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ভারত ও চিনের সেনা। আগামী দিনে যে কোনও সময় ফের সংঘাত বাড়ার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে জোজি লা সুড়ঙ্গের কাজ দ্রুত শেষ করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ জোজি লা প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। তার পরে ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল, ২০২৫ সাল নাগাদ জোজি লা সুড়ঙ্গের কাজ শেষ করার। কিন্তু মোদী সরকার ২০২৩ সালে, অর্থাৎ লোকসভা ভোটের আগেই তা শেষ করতে চাইছে। যাতে ভোটে এর কৃতিত্বের কথা তুলে ধরা যায়।
শ্রীনগর ও লাদাখ সংযোগকারী জোজি লা সুড়ঙ্গ সারা বছর খোলা থাকবে। শীতে বরফ জমে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে লাদাখের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন ভরসা কেবল আকাশপথ। এক দিকে বিচ্ছিন্নতা বোধের সমস্যা, অন্য দিকে লাদাখ সীমান্তে চিনা সেনার বছরভর উপস্থিতি, এই দুই কারণে শ্রীনগর ও লাদাখের মধ্যে সারা বছর চালু থাকে এমন একটি সুড়ঙ্গের দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। ২০১৮-তে কাজ শুরু করার পরেও বরাত পাওয়া সংস্থাটি দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এর পরে নতুন করে দরপত্র ডাকা হয়। এক বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১,৫৭৮ ফুট উঁচুতে ১৪.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিমুখী সুড়ঙ্গ তৈরির দায়িত্ব পায় হায়দরাবাদের সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার’।
এই প্রকল্পে কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে, অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্পের বিপরীত প্রান্ত থেকে হিমালয়ের বুক চিরে ওই সুড়ঙ্গ পৌঁছে যাবে লাদাখের মিনিমার্গে। যার মাধ্যমে শ্রীনগরের সঙ্গে বছরভর সংযুক্ত থাকবে লাদাখ-লেহ, কার্গিল, দ্রাসের মতো সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলি। সংঘাতের পরিস্থিতিতে বছরের যে কোনও সময়ে রসদ ও সমর-সরঞ্জামবাহী গাড়ি, এমনকি ট্যাঙ্কও পৌঁছে যাবে লাদাখ সীমান্তে। সোনমার্গ থেকে শ্রীনগরের মধ্যে ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জেড মোড় নামে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রথম সুড়ঙ্গের মাধ্যমে শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ ও তার পরে জোজি লা সুড়ঙ্গ দিয়ে লাদাখ পৌঁছনো সম্ভব হবে চরম প্রতিকূল আবহাওয়াতেও।
সোনমার্গ থেকে বালতাল হয়ে সিন্ধু নদীকে সাক্ষী রেখে যে ১ নম্বর জাতীয় সড়ক গিয়েছে, তার দু’ধারের ধূসর পাহাড়ের ঢালে গত শীতের বরফ এখনও জেগে আছে ইতিউতি। নীচে পাহাড়ের এক প্রান্ত দিয়ে সুড়ঙ্গের সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। বালতাল প্রান্তে সুড়ঙ্গের বিশাল হাঁ-মুখের সামনে দাঁড়িয়ে নির্মাণ সংস্থার মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত কুমার বলেন, “শ্রীনগর থেকে লাদাখের দিকে যাওয়ার জন্য থাকছে দু’টি রাস্তা। আসার জন্য থাকবে একটি রাস্তা। অত্যাধুনিক এই সুড়ঙ্গের এক প্রান্তের রাস্তা যতটা চওড়া, তাতে সেনা-ট্যাঙ্কের মতো ভারী যান অনায়াসে চলে যেতে পারবে। এমন উচ্চতায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা এশিয়ায় তো বটেই বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প।” প্রশান্ত কুমার জানালেন, শীতে মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে থাকার জন্য বিশেষ বাড়ি ও কাজ চালু রাখতে কর্মীদের জন্য বিশেষ গরম জামার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ঘন বরফে চলতে সক্ষম গাড়ি আানা হচ্ছে বিদেশ থেকে। সংস্থার লক্ষ্য, একটি কর্মদিবসও যেন নষ্ট না হয় কোনও ভাবে।
কাজ শেষের সময়সীমা এগিয়ে আনার পিছনে গডকড়ীর খোলাখুলি যুক্তি, ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ হলে এর কৃতিত্ব দাবি করে ভোট চাইবে বিজেপি। সুড়ঙ্গের লাদাখ ও বালতাল প্রান্তে কাজ হয়েছে যথাক্রমে ২৫০ ও ২০০ মিটার। দু’বছরে বাকি প্রায় ১৪ কিলোমিটার সুড়ঙ্গের কাজ শেষ করা যে প্রায় দুঃসাধ্য, তা মেনে নিয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। পরে গডকড়ীও বলেন, “কাজ দ্রুত চাইছি ঠিকই, কিন্তু গুণমানের ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হবে না।”