Nirbhaya Fund

নির্ভয়া তহবিল নিয়ে প্রশ্ন উঠল রিপোর্টে

রিপোর্ট বলছে, টাকা শুধু পড়েই থাকছে না, এমন এমন খাতে তা ব্যবহার হচ্ছে, যার সঙ্গে নারীকল্যাণের সরাসরি তেমন যোগই নেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রশ্ন উঠেছে বারবার। মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকা পড়ে থাকছে অব্যবহৃত হয়ে। এই খাতে দেওয়া কেন্দ্রের টাকা কোথায় যাচ্ছে, সে সম্পর্কে আধিকারিকদেরও স্পষ্ট ধারণা নেই বলে আগেই দেখা গিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফ্যামের সাম্প্রতিক রিপোর্টে সেই পুরনো অভিযোগই ফের মাথাচাড়া দিল। গত তিন বছরে ওই তহবিলের টাকা কী ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে রিপোর্টটি তৈরি করেছে তারা। রিপোর্ট বলছে, টাকা শুধু পড়েই থাকছে না, এমন এমন খাতে তা ব্যবহার হচ্ছে, যার সঙ্গে নারীকল্যাণের সরাসরি তেমন যোগই নেই।

Advertisement

২০১৯-২০ অর্থবর্ষের বাজেটে নির্ভয়া তহবিলে ৪৩৫৭.৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। রিপোর্ট বলছে, এই বরাদ্দের সিংহভাগ পায় পুলিশি ব্যবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত, অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কী ভাবে ব্যবহার হয়েছে সেই টাকা? অক্সফ্যামের তরফে অমৃতা পিত্রে জানিয়েছেন, ফরেন্সিক ল্যাবের উন্নয়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা, সাইবার অপরাধ মোকাবিলার পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতে বরাদ্দ হয়েছে টাকা। স্পষ্টতই, তাতে পুলিশের হাত মজবুত হলেও মহিলাদের সরাসরি উপকৃত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। বস্তুত, ২০১৭ সালে নির্ভয়ার মা আশা দেবীও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ণের বদলে রাস্তা তৈরির মতো কাজে ব্যবহার হচ্ছে নির্ভয়া তহবিলের টাকা।’’

নির্ভয়া তহবিল খাতে সাম্প্রতিক বাজেটে বরাদ্দও পর্যাপ্ত নয় বলে জানাচ্ছে রিপোর্টটি। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের ৬০ শতাংশের পাশে দাঁড়াতে গেলেও যে টাকা প্রয়োজন, তার ২৫ শতাংশও বরাদ্দ হয়নি। মহিলারা সরাসরি উপকৃত হবেন এমন প্রকল্প, অর্থাৎ ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট, আশ্রয় শিবির বা হেল্পলাইন তৈরির জন্য বরাদ্দের পরিমাণ এই অর্থবর্ষের মোট বাজেট বরাদ্দের ০.০৭ শতাংশেরও কম।’’

Advertisement

কম বরাদ্দের পাশাপাশি রয়েছে টাকা যথাযথ ভাবে খরচ না-হওয়ার পুরনো অভিযোগও। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যই নির্ভয়া তহবিলের টাকা খরচে পিছিয়ে রয়েছে বলে রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ছাড়াও কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, আইন, রেল, সড়ক ও পরিবহণের মতো মন্ত্রকের মাধ্যমে নির্ভয়া তহবিলের টাকা খরচ হওয়ার কথা। রিপোর্টের দাবি, অধিকাংশ মন্ত্রকই সেই টাকা খরচ করেনি। বরং সিসিটিভি বা জোরালো পথবাতির সংখ্যা বাড়ানোর মতো ‘তুলনায় সহজ’ কাজে খরচ হয়েছে কিছু টাকা।

নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক যেমন ২০১৯ সালে পাওয়া টাকার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহার করেছে। কয়েকটি প্রকল্প চালু হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়ে রিপোর্টের অন্যতম মস্তিষ্ক অমৃতা বলছেন, ‘‘যেটা দরকার, তা হল খরচের পথে বাধার মুখটা খোলা এবং যথাযথ ভাবে টাকা কাজে লাগানো।’’ দেখা যাচ্ছে, আশ্রয় শিবির থাকলেও সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মী নেই, ‘রেপ কিট’ বা ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহ করে তা সংরক্ষিত রাখার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। নির্যাতিতাকে ছিন্নভিন্ন পোশাকে উদ্ধার করা হলে তাঁকে নতুন পোশাকও দেওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ জানাতে এলে পুলিশের তরফেও গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে গেলেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কিন্তু তাতে ঘাটতি রয়েছে।

অক্সফ্যামের রিপোর্টের প্রস্তাব, নির্ভয়া তহবিলে প্রয়োজন দশ থেকে এগারো হাজার কোটি টাকা। প্রয়োজন তার উপযুক্ত ব্যবহার। এই টাকার অন্তত অর্ধেক যাক নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকে। তৈরি হোক সরাসরি মহিলাদের উপকৃত হওয়ার মতো প্রকল্প। মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা নামক মহামারিকে তবেই একটা জোরালো ধাক্কা দেওয়া যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement