মুনিরকা বাসস্ট্যান্ড।
রাতের অন্ধকারে দিল্লির মুনিরকা এলাকার একটি বাসস্টপ থেকে বন্ধুর সঙ্গে বাসে উঠেছিল বছর তেইশের মেয়েটা। ফাঁকা বাসে তাঁকে ধর্ষণ ও ভয়াবহ যৌন নির্যাতন করেছিল এক নাবালক-সহ ছয় দুষ্কৃতী। তার পর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল বাস থেকে নীচে, রাস্তায়। মারধর করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল সঙ্গীটিকেও। ১৩ দিন ধরে অনেক যুদ্ধের পরে সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মারা গিয়েছিল মেয়েটি।
প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল থেকে বিচারের লাইনে সাত বছর কেটে গিয়েছে তার পরে। মঙ্গলবার নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের চার অপরাধীর ফাঁসির দিন ঘোষণা করেছে আদালত। কিন্তু অন্ধকার কি কেটেছে? কতটা বদলেছে দিল্লির সেই নির্জন মুনিরকা বাসস্টপ?
এখনও ওই বাসস্টপেই বাসের জন্য অপেক্ষা করেন নির্ভয়ার মতো অনেকেই। রাতও হয়ে যায় প্রায় দিনই। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, রাত ন’টার পরে বেআইনি পার্কিংয়ের স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়ায় ওই এলাকা। প্রায় প্রতিদিনই অশ্লীল কথাবার্তা ও মন্তব্যের শিকার হতে হচ্ছে মেয়েদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বছর চব্বিশের তরুণী জানালেন, নির্ভয়ার ঘটনার পরে সরকারি তরফে নিরাপত্তামূলক যত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা রাতের অন্ধকারে আজও একই রকম অমিল। বাসে বাসে সিসিটিভি ও জিপিএস যন্ত্র বসানোও সেই তিমিরে। বাসস্টপের অবস্থা আজও একই রকম ভয়ঙ্কর বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুনিরকাতেই থাকি। আমার মা-বাবা বোধহয় অন্য কোথাও গেলে এতটা দুশ্চিন্তা করেন না, যতটা করেন নিজেদের এই এলাকায়। রোজ অফিস থেকে ফেরার সময়ে এই স্টপে বাড়ির কেউ আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। বাবা বা কাকা বা দাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরি রোজ।’’ রাত বাড়লেই দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে ওই বাসস্টপ এলাকা। সে কথা জানিয়েছেন বছর সাতাশের রানি কুমারীও। তাঁর কথায়, ‘‘বাসস্টপে নামার পরে প্রতিদিনই দেখি, প্রচুর অটো এখানে দাঁড় করানো রয়েছে। অটোচালকদের ‘খারাপ’ নজর এড়িয়ে এ রাস্তায় যাতায়াত সে সময়ে প্রায় অসম্ভব।’’
রানির কথায় সম্মতি জানান বছর পঁয়ত্রিশের মীনাও। তাঁর অভিযোগ, রাতের দিকে অটোচালকেরাও যেতে আপত্তি জানান। যদিও সরকারি তরফে বলা হয়, অটোচালকেরা যেতে আপত্তি জানালে অভিযোগ করতে। বাস্তবে দেখা যায়, অটোচালকেরা এমন এমন বাহানা বানাচ্ছেন, তার উপরে বলার কিছু নেই। ফলে বেশির ভাগ সময়েই ফাঁকা, নির্জন রাস্তার গোটাটাই পেরোতে হয় পায়ে হেঁটে।
নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ধর্ষণ নিয়ে ভারতীয় আইনে কিছু পরিবর্তন এলেও সমাজের ছবিটা যে বিশেষ পাল্টায়নি, তা বলে দিচ্ছে মুনিরকার ওই অন্ধকার বাসস্টপ।