শিল্পী সুনীল দেওরে। দু’পাশে পুরনো (ডানদিকে) এবং নতুন অশোকস্তম্ভ (বাঁদিকে)।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উন্মোচিত নতুন জাতীয় প্রতীকের সিংহগুলি ‘উগ্র’— অভিযোগ এনেছিলেন বিরোধীরা। তবে তার স্রষ্টা এ বিষয়ে একমত নন। তিনি বরং বলেছেন, পুরনো প্রতীকের সিংহগুলির সঙ্গে নতুনটির সিংহের কোনও পার্থক্য নেই। তাঁর দাবি, পুরনোটিরই নিখুঁত প্রতিকৃতি নতুন প্রতীকটি। বিরোধীরা যে ছবি দেখে এই অভিযোগ আনছেন তা আদতে দৃষ্টিবিভ্রম ছাড়া কিছু নয়।
ঔরঙ্গাবাদের শিল্পী সুনীল দেওরে এবং জয়পুরের লক্ষ্মণ ব্যাস ৯৫০০ কেজির ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করেছেন নতুন সংসদ ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তার মাথায় নব উন্মোচিত মূর্তিটি। সুনীলকে ওই মূর্তি তৈরি বরাত দিয়েছিল সেন্ট্রাল ভিস্তার বরাত পাওয়া টাটা প্রজেক্ট লিমিটেড। প্রতীক নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সুনীল একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উগ্র-বিতর্কে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো স্থাপত্যটির প্রতি পূর্ণ সম্মান দিয়েই নতুন প্রতীকটি তৈরি করেছি।’’ এমনকি, নতুন প্রতীক তৈরি করার আগে তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে বিশদ গবেষণা করেছিলেন বলেও জানান সুনীল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি একজন শিল্পী। আর শিল্পী হিসাবে শিল্পের প্রতি যতটা নিবেদিতপ্রাণ হওয়া যায়, ততটাই হয়েছি আমি। সেই সমস্ত স্থানে গিয়েছি, যেখানে এই মূর্তিটি এর আগে তৈরি করা হয়েছিল। তাই বিরোধীরা যখন ওই মূর্তির সমালোচনা করছেন, তখন আঘাত আমারও লাগছে। কারণ মূর্তিটি বানানোর সময় আমি কোনও রকম অবহেলা করিনি।’’
কিন্তু কেন তাঁর মূর্তি নিয়ে বিতর্ক? সুনীলের দাবি, ‘‘মূর্তিটি আসলটির থেকে আলাদা দেখাচ্ছে ছবি তোলার কৌণিকতার জন্য। ওই প্রতীকের যে ছবিটি তোলা হয়েছে সেটি নেওয়া হয়েছে নীচের দিক থেকে। যার ফলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিংহের শ্বদন্তগুলি। হয়তো সে জন্যই উগ্র দেখাচ্ছে সিংহগুলিকে।’’
প্রসঙ্গত, মোদী উন্মোচিত নতুন প্রতীক নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি তোলে রাষ্ট্রীয় জনতা দল। একটি টুইট করে তারা বলেছিল, ‘সারনাথের মন্দিরের যে অশোক স্তম্ভকে ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তার সিংহটি অনেক সৌম্য এবং শান্ত স্বভাবের। তুলনায় নতুন সংসদ ভবনের উপরের নতুন অশোক স্তম্ভের মূর্তিটি হিংস্র। তাদের দেখে মনে হচ্ছে গিলে খেতে আসছে।’ আরজেডি এ ব্যাপারে কেন্দ্রের মোদী সরকারের চরিত্র নিয়ে কটাক্ষও করে। ওই টুইটেই তারা লেখে, ‘প্রতীককে সাধারণত চরিত্র বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়। মোদী সরকারের নতুন প্রতীকেও তার চরিত্র স্পষ্ট।’
এর পরই একে একে বিরোধীরা ওই প্রতীক নিয়ে সরব হন। প্রতীক-বিতর্কে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন আইনজীবী তথা সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ। সারনাথের অশোকস্তম্ভের সিংহগুলিকে তিনি ‘মহাত্মা গান্ধীর মতো শান্ত’ এবং নতুন সংসদ ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তার সিংহকে ‘নাথুরাম গডসের মতো উগ্র’ বলে তুলনা করেন। টুইট করে প্রশান্ত লেখেন, ‘এটাই মোদীর নতুন ভারত!’
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও প্রতিক্রিয়া জানান। সম্প্রতি দেবী কালী নিয়ে মন্তব্য বিতর্কে জড়ানো কৃষ্ণনগরের সাংসদ অবশ্য অশোক স্তম্ভ বিতর্কে কোনও শব্দ খরচ করেননি। শুধু টুইটারে পুরনো এবং নতুন প্রতীকের ছবি দু’টি পাশাপাশি শেয়ার করেছেন।
আম আদমি পার্টির রাজ্য সভার সদস্য সঞ্জয় সিংহ টুইট করে জানতে চান, ‘জাতীয় প্রতীক বদলে দেওয়ার এই চেষ্টা কি দেশদ্রোহ নয়!’ পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য এবং প্রসার ভারতীর প্রাক্তন প্রধান জহর সরকারও দু’রকম প্রতীকের ছবি শেয়ার করে বিবরণে লেখেন, ‘এটি জাতীয় প্রতীকের অবমাননা। আমাদের আসল প্রতীকের সিংহগুলি রাজকীয় অথচ কমনীয়। মোদীর সংস্করণটি অকারণ উগ্রতায় পরিপূর্ণ। এটি বদলানো দরকার।’
যদিও বিরোধীদের এই সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি বলেছিল, ‘‘বিরোধীরা কেন্দ্রের সমালোচনার একটি নতুন বিষয় খুঁজে পেয়েছে। এর বেশি কিছু নয়।’’