—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দিল্লির জি২০ বৈঠকের প্রথম দিনেই প্রায় ‘অসাধ্য’ কাজ করে ফেলল ভারত। আয়োজক দেশ হিসাবে ভারতের প্রস্তাবিত দিল্লি ঘোষণাপত্রে সম্মতি জানাল শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্র। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও এই ঐক্যের সুর ধরা থাকবে। অর্থাৎ, রবিবার সম্মেলনের শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র পাঠের সময় বেসুরো কিছু ঘটবে না। বিশ্বে সু্স্থায়ী উন্নয়ন এবং শান্তির লক্ষ্যে ঘোষিত হতে চলা পত্রে স্বাক্ষর থাকবে আমেরিকা, চিন, রাশিয়ারও।
এই সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী’ বলে বর্ণনা করছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সার্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার খবরটি ঘোষণা করে বলেন, “আমি ভাল খবর পেয়েছি। আমাদের টিমের কঠিন পরিশ্রমের ফলে নয়াদিল্লির জি২০ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে।” সাফল্যের জন্য এই সম্মেলনে ভারতের শেরপা অমিতাভ কান্ত, মন্ত্রী এবং অন্যান্য সহযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সুস্থায়ী এবং ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়নের বিষয়ে এক মত হয়েছে সদস্য দেশগুলি। বহুমুখী এবং বৈষম্যহীন বাণিজ্যের পক্ষেও সওয়াল করা হয়েছে এই ঘোষণাপত্রে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে মোদীর পুরনো একটি মন্তব্যই একটু অন্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এই ঘোষণাপত্রে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বর্তমান সময় কোনওভাবেই যুদ্ধের সময় নয়।” রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “কোনও রাষ্ট্র ভূখণ্ড বাড়াতে অন্য দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে।” তবে নির্দিষ্ট কোনও দেশের নাম ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই কার্যত দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে জি২০-র সদস্য দেশগুলি। আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলির তরফে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য প্রস্তাব গ্রহণের চেষ্টা হলেও রাশিয়া তো বটেই, তার বিরোধিতা করেছে চিনও। এই পরিস্থিতিতে যৌথ ঘোষণাপত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে চিন্তায় ছিল নয়াদিল্লিও। কারণ তার উপরেই অনেকাংশে নির্ভর করত সম্মেলনের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা। বৈঠকের শেষে যাতে তাল না কাটে, তার জন্য অন্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক প্রস্তুতি বৈঠক সেরে রেখেছিলেন ভারতের শেরপা কান্ত। বৈঠকের প্রথম দিনই নয়াদিল্লির ঘোষণাপত্রে সিলমোহর দিল সদস্য দেশগুলি।
উল্লেখ্য যে, আমেরিকা এবং পশ্চিমি দুনিয়ার ধারাবাহিক চাপ সত্ত্বেও রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব সমর্থন করেনি ভারত। মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগও ছিন্ন করেনি। আগাগোড়াই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বছর আগে উজবেকিস্তানে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বৈঠকে প্রকাশ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন, ‘‘এখন যুদ্ধের সময় নয়।’’ সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও মোদী সরকারের এই ভারসাম্যের কূটনীতিকে সমর্থন করেছেন।
জি২০ ঘোষণাপত্র সম্পর্কে শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে এক প্রশ্নের উত্তরে কান্তকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘জি২০ একটি অর্থনৈতিক মঞ্চ। অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বৃদ্ধি এর লক্ষ্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গত বছর জি২০-তে অবশ্য যুদ্ধের (ইউক্রেন) ফলে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের সঙ্কটের বিষয়টি সামনে এসেছিল এবং তাই আলোচনাও হয়েছিল। এ বারের বৈঠকের সময়েও সংঘাতের (ইউক্রেন) ফলে আর্থিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আমরা এই নিয়ে নেতাদের কাছে আমাদের মতামত জানিয়েছি।’’