গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
লকডাউন চলছে চলুক, কর্তব্যে যেন গাফিলতি না হয়— নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। দু’দিন ধরে সড়ক পথে হাজার দুয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে অবধের সমতল থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুদূর খাসি পর্বতে। কিন্তু পুরোদস্তুর কাজে যোগ দিতে পারলেন না মেঘালয় হাইকোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। পাঁচটি রাজ্যের সীমানা ছুঁয়ে শিলং পৌঁছেছেন তিনি। তাই বিচারপতি সমাদ্দারকে পাঠিয়ে দেওয়া হল কোয়রান্টিনে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন এক সময়ে। পরে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশে, ইলাহাবাদ হাইকোর্টে। এ বার গেলেন মেঘালয় হাইকোর্টে, প্রধান বিচারপতি হয়ে। লকডাউনের আগেই সে নির্দেশ জারি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার তারিখ ছিল ২৭ এপ্রিল। কারণ মেঘালয় হাইকোর্টে এত দিন যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তিনিও ওই তারিখেই ওড়িশার প্রধান বিচারপতি হিসেবে যে শপথ নেবেন, তা নির্দিষ্ট ছিল। দেশজোড়া লকডাউন চলুক আর যা-ই হোক, দেরি করায় বিশ্বাসী নন বাঙালি বিচারপতি। তাই তিনি সময় মতোই ইলাবাবাদ থেকে শিলং পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু শপথ নেওয়া মাত্রই রাজ্য সরকার তাঁকে অনুরোধ করল, ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে যেতে।
মেঘালয় হাইকোর্ট থেকে যিনি ওড়িশা হাইকোর্টে গেলেন, তিনি কিন্তু শিলঙে নিজের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগেই রাজস্থানে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভুবনেশ্বরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার গাড়িতে যান। তাই ২৭ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার শপথ নেওয়ার কথা থাকায় তিনি ২৫ এপ্রিল অর্থাৎ শনিবারই রওনা হয়ে যান ইলাহাবাদ থেকে। সে দিন রাতে যাত্রা শুরু করে ২৬ এপ্রিল অর্থাৎ রবিবার সকাল নাগাদ বিচারপতি সমাদ্দার কলকাতায় ঢোকেন। অল্প একটু বিশ্রামের পরে কলকাতা থেকে ফের রওনা দিয়ে শিলিগুড়ি এবং অসমের গুয়াহাটি হয়ে তিনি রবিবার রাতেই পৌঁছে যান শিলং। ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। রাজ্য সরকার তখনই জানিয়ে দিয়েছিল যে, শপথ অনুষ্ঠান শেষ হলেই নতুন প্রধান বিচারপতিকে কোয়রান্টিনে যেতে অনুরোধ করা হবে।
আরও পড়ুন: দোকানপাট খোলা নিয়ে আজই নতুন নির্দেশিকা দিতে পারে নবান্ন
সোমবার সকালে মেঘালয়ের বাঙালি রাজ্যপাল তথাগত রায় শিলঙের রাজভবনে শপথবাক্য পাঠ করান হাইকোর্টের বাঙালি প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারকে। তার পরে মেঘালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন প্রধান বিচারপতি ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়রান্টিনে থাকতে অনুরোধ করেন।
শিলং সূত্রের খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে আগেই এ বিষয়ে কথা বলে রেখেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রোটোকল বহাল রাখতে রাজ্যপালের মাধ্যমেই তিনি যোগাযোগ করেন নতুন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। দু’দিন ধরে যে হেতু উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ছুঁয়ে যে হেতু তিনি মেঘালয়ে পৌঁছেছেন, সে হেতু রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশিকা মেনে তিনি যাতে আপাতত ১৪ দিন আদালতে বা নিজের দফতরে না যান, সেই অনুরোধ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের অনুরোধ মেনে নিয়ে প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার হোম কোয়রান্টিনে চলে গিয়েছেন। ১১ এপ্রিলের আগে তিনি আদালতে বা নিজের দফতরে যাবেন না।
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে গ্রিন জোনে জেলার মধ্যে ২০ যাত্রী নিয়ে চলবে বাস: মুখ্যমন্ত্রী
বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার কিন্তু ইলাহাবাদ থেকে শিলং যাওয়ার পথে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই সফর করেছেন। ৪টি গাড়ির কনভয় নিয়ে ইলাহাবাদ থেকে শিলং পৌঁছন বিচারপতি সমাদ্দার। মোট ৫ জন চালক ছিলেন, বিচারপতি নিজে ছিলেন, তাঁর ২ সহায়ক ছিলেন এবং ১ নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। ৪টি গাড়িতে সফর করায় প্রত্যেকেই পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব রেখেই বসতে পেরেছেন। কিন্তু মেঘালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে রবিবারই জানিয়ে দেন যে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার যে বিধিনিষেধ জারি করে রেখেছে, প্রধান বিচারপতিকেও সে বিষয়ে জানানো হবে। বাইরের রাজ্য থেকে কেউ এখন মেঘালয়ে ঢুকলেই সে রাজ্যের সরকার তাঁকে আগে ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে পাঠাচ্ছে। নতুন প্রধান বিচারপতিকেও তাই সেই একই অনুরোধ করা হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে।
প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার সোমবার শিলঙের রাজভবনে শপথ নেওয়ার পরে সরাসরি ফিরে যান নিজের বাংলোয়। তবে মেঘালয়ের মুখ্যসচিব সোমবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং মেঘালয় রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিচারপতি সমাদ্দারের নাম প্রকাশ করেছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)