নেতাজির এই টুপিই খোয়া গিয়েছে বলে বেশ কয়েক দিন ধরে অভিযোগ উঠছিল।
চুরি বা খোয়া যায়নি। নিরাপদেই রাখা আছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অমূল্য সামগ্রী। দিল্লি নয়, কলকাতার ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়ালের সংগ্রহশালায় সেটি রাখা আছে। লালকেল্লার সংগ্রহশালা থেকে নেতাজির মূল্যবান সামগ্রী চুরি যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে গত কয়েক দিনে জল অনেকটাই গড়িয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাজিকে নিয়ে যে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সেখানে রয়েছে নেতাজির টুপি ও জাপানি তলোয়ার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালও জানিয়েছে, তাদের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এই সব জিনিস।
বসু পরিবারের তরফে কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বেশ কিছু অমূল্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে নেতাজির কালো রংয়ের ত্রকটি টুপি এবং তাঁকে দেওয়া জাপানিদের একটি তলোয়ারও ছিল। ২০১৯ সালে টুপিটি নিজে হাতে লালকেল্লার সংগ্রহশালায় কাচের বাক্সে সাজিয়ে রাখেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাস্তায় কৃষক আন্দোলন এবং লকডাউন কাটিয়ে যখন সংগ্রহশালা ফের খোলে, সেই সময় নেতাজির টুপি, তলোয়ার কোনওটারই দেখা মেলেনি। বরং কাচের বাক্সগুলি খালি অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা।
বিষয়টি চাউর হতে সময় লাগেনি। কেন্দ্রের তরফে এ নিয়ে কোনও বিবৃতি না আসায়, জল্পনা আরও জোরালো হয়। জিনিসগুলি চুরি গিয়েছে কি না, নেটমাধ্যমে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন অনেকে। তা নিয়ে মুখ খোলেন বসু পরিবারের সদস্য তথা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বসুও। নেতাজির টুপি হাতে প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি পোস্ট করে টুইটারে লেখেন, ‘লালকেল্লা ছাড়া এ দিক ও দিক কোথাও যাতে সরানো না হয় সেই শর্তেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির হাতে নেতাজির ঐতিহাসিক টুপি তুলে দিয়েছিল বসু পরিবার। টুপিটিকে তার জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে অনুরোধ করছি নরেন্দ্র মোদীজিকে।’ নিজের টুইটে #নেতাজিজক্যাপমিসিং-ও লেখেন চন্দ্র বসু।
এর পরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রক এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) বিভাগের আধিকারিকরা। জানান, ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর ২৩ জানুয়ারি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজিকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হয়। সেই উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষকে জিনিসগুলি ধার দেওয়া হয়েছে। তার জন্য প্রক্রিয়া মেনে দু’পক্ষের মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে যার মেয়াদ ছ’মাস। প্রয়োজনে তা এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
রবিবার রাতে এ নিয়ে টুইট করেন খোদ সাংস্কৃতিক মন্ত্রী প্রহ্লাদ পটেল। তিনি লেখেন, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর টুপি এবং তলোয়ার সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছে। নেতাজির মোট ২৪টি সামগ্রী কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে দিয়েছে এএসআই। ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে প্রদর্শনীর জন্যই সেগুলি দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্র ফেরতও আনা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নির্দেশক জয়ন্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাজি ব্যবহৃত বিবিন্ন সামগ্রী আনা হয়েছিল। সংগ্রহশালাগুলির মধ্যে এ ভাবে মূল্যবান সামগ্রী ধার নেওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাজির টুপি, চশমা, জাপানি তলোয়ার, তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের উর্দি আনা হয়েছে। তার জন্য মউ স্বাক্ষর করেছি আমরা।’’
জয়ন্ত আরও বলেন, ‘‘অবনীনন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র ছিলেন অসিতকুমার হালদার। কিন্তু তাঁর আঁকা খুব কম ছবিই কলকাতায় রয়েছে। অথচ ইলাহাবাদের সংগ্রহশালায় প্রায় ১০০ ছবি রয়েছে তাঁর। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে ছবি আনিয়ে প্রদর্শনী করিয়েছিলাম আমরা। পরে আবার ফেরতও পাঠিয়ে দিই। এর আগে, ভারতীয় সেনা, ন্যাশনাল আর্কাইভস থেকেও মূল্যবান জিনিসপত্র ধার নিয়েছি আমরা। আবার আমাদের কাছ থেকেও অন্য জায়গায় মূল্যবান সামগ্রী গিয়েছে এবং ফিরে এসেছে।’’ নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী দু’বছর ধরে প্রদর্শনী চলবে বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত। তাই ছ’মাসের মউ স্বাক্ষরিত হলেও, তাঁরা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, টুপি চুরি যায়নি জানতে পেরে সোমবার বিষয়টি নিয়ে ফের সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন চন্দ্র বসু। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘লালকেল্লা নয়, নেতাজির টুপি যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে রয়েছে, সাংস্কৃতিক মন্ত্রক আমাদের আগে জানালেই পারত। নেতাজির ব্যক্তিগত ব্যবহারের টুপি এ ভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো উচিত নয়।’’