শিল্পীর মুখে মাস্ক। কিন্তু মাস্ক পরেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার মণিপুরে। ছবি— পিটিআই।
ফেব্রুয়ারিতে মণিপুরে বিধানসভা ভোট। আজ ইম্ফলের হপ্তা কাংজেইবুং এলাকায় ৪৮১৫ কোটি টাকার ২২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কার্যত ভোটের ঢাক বাজিয়ে দিলেন।
সরকারি অনুষ্ঠান হলেও বছরের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদীর মণিপুর ঘণ্টাখানেকের সফরকে পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রচার হিসেবে কাজে লাগাতে কোনও কসুর করেনি রাজ্য বিজেপি। ওমিক্রন ও কোভিড সংক্রমণ বাড়ায় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা ছিল। মোদীর জনসভা ও অভ্যর্থনায় অবশ্য যে ভাবে ভিড় দেখা গেল তাতে আসন্ন মাস দুয়েকে রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও প্রবল। মোদীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তায় কার্যত মানবপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল।
মোদী বলেন, “২১ জানুয়ারি মণিপুরের পূর্ণ রাজ্য হওয়ার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। দেশও স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পালন করছে। নেতাজি এখানে প্রথম তেরঙা উড়িয়েছিলেন। আজ সেই মণিপুর নতুন ভারতের স্বপ্নপূরণের প্রবেশ দ্বার হয়ে উঠেছে।” জল সরবরাহ, সড়ক ও ট্রেন যোগাযোগের সূচনা, ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি ও উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মোদী বলেন, এটাই ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের শক্তি ও সুবিধা।
কেন্দ্রের তরফে পাম তেল চাষ চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে উত্তর-পূর্বে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে হাজার কোটির পাম তেল আমদানি করে। দেশকে খাদ্য তেলে আত্মনির্ভর করতেই পাম তেল চাষে ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে দেশের টাকা কৃষকদের ঘরে আসবে। পাম তেলে চাষের সুবিধে বেশি করে পাবে উত্তর-পূর্ব।”
মণিপুরের পরে ত্রিপুরায় যান প্রধানমন্ত্রী। রাজনীতিকদের মতে, বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার যে ত্রিপুরায় ‘বিকাশ’-এর বন্যা বইয়ে দিয়েছে তা বোঝাতে আজ আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা ও অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগমের ব্যবস্থা করেছিল বিজেপি।
মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন করতে এ দিন আগরতলায় এসেছিলেন মোদী। আরও দু’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ত্রিপুরার সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধের সংমিশ্রণে নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরি হয়েছে। পরে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া এক জনজাতি কন্যা আমাকে দেখে কেঁদে ফেললেন। এই শতাব্দীতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে।’’ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের অর্থ হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার অর্থাৎ সংবেদনশীলতা এবং জনগণের শক্তি বৃদ্ধি করার সঙ্গে সমৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
ত্রিপুরায় মোদীর সভায় জনসমাগম নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভাষায় টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তাঁর টুইটকে ট্যাগ করেই তৃণমূলের বার্তা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। ত্রিপুরাকে কোভিড তৈরির হাব করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সত্যিই মনে করেন তাঁর মানুষকে রক্ষা করার ক্ষমতা আছে?’’