কৃষি পরিকাঠামো তহবিল চালু করার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
রামের পরে এ বার বলরাম!
রামমন্দিরের শিলান্যাসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, রাম সকলের। সকলের মধ্যেই রাম রয়েছেন। রবিবার ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল চালু করে প্রধানমন্ত্রী দেশের চাষিদের উদ্দেশে বললেন, ‘সকলের উপরে ভগবান বলরামের আশীর্বাদ থাকুক’।
গত মাসেই ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। জমি থেকে ফসল তোলার পরে তা মজুত করা ও বাজারে ভাল দাম পেলে সুযোগ মতো তা বিক্রির করার পরিকাঠামো তৈরির জন্য এই তহবিল থেকে চার বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বিলি হবে। তা চালু করার জন্য কৃষি মন্ত্রক রবিবারই বেছে নিয়েছিল। কারণ এই দিনটি হালষষ্ঠী ও বলরাম জয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয়।
খতিয়ান
• এক লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল
• গুদাম, হিমঘর, কৃষি বিপণনের পরিকাঠামো তৈরির জন্য ঋণ বিলির জন্য তহবিল
• চলতি বছরে ঋণ বিলি হবে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা
• আগামী তিন অর্থ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা করে ঋণ বিলি হবে
• কৃষক সংগঠন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, কৃষি ঋণ সংস্থা, স্টার্ট-আপ, কৃষিতে লগ্নিকারীরা এর সুবিধা পাবেন
• প্রথম ধাপে ২২৮০টি কৃষক সংগঠনের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর
• ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণে ৩ শতাংশ সুদের ভর্তুকি
রবিবার সকালে প্রকল্প চালু করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ হালষষ্ঠী। ভগবান বলরামের জয়ন্তী। চাষিরা বলরামকে পুজো করেই হাল চালানো শুরু করেন। সমস্ত দেশবাসী, বিশেষ করে কৃষক বন্ধুদের হালছট, দাউ জন্মোৎসবের শুভেচ্ছা। এই পুণ্যদিনেই কৃষির পরিকাঠামো তৈরির জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চালু করা হচ্ছে।’’ আজ পিএম-কিষাণ প্রকল্পেও ৮.৫ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ষষ্ঠ কিস্তির ১৭ হাজার কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেক ইন ইণ্ডিয়া: ১০১ প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
আরও পড়ুন: পর পর জঙ্গি হানা বিজেপি নেতাদের উপরদল ছাড়ার হিড়িক জম্মু-কাশ্মীরে
এক লক্ষ কোটি টাকার তহবিল হলেও চলতি বছরে এই তহবিল থেকে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিলি হবে। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২২০০ কৃষি সমবায় সংস্থার জন্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা করে বিলি করা হয়েছে। আগামী তিনটি অর্থ বছরে প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা করে বিলি করা হবে। এই তহবিল যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে অবশ্য কৃষি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, কৃষিক্ষেত্রও এ বার আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। এই তহবিলের সাহায্যে গ্রামে ফসল মজুত রাখার জন্য গুদাম, হিমঘর তৈরি হবে। তার সঙ্গে অত্যাবশকীয় পণ্য আইন, কৃষি পণ্য বিপণন আইনে সংশোধনের মতো সংস্কার হয়েছে। ফলে চাষিরা ফসলের সঠিক দাম পাবেন। মোদী বলেন, ‘‘কারখানার মালিকরা যেমন নিজের জিনিসের দাম ঠিক করেন, দেশে যে কোনও এলাকায় তা বেচতে পারেন, চাষিদের সেই সুবিধা নেই কেন, তা নিয়ে কয়েক দশক ধরে আলোচনা চলছে। শিল্পের জন্য যেমন পরিকাঠামো দরকার, তেমন কৃষিরও আধুনিক পরিকাঠামো দরকার। কেউ সাবান তৈরি করলে যেখানে কারখানা, সেখানেই বেচতে হবে, এমন শর্ত থাকে না। অথচ শাকসবজির ক্ষেত্রে যেখানে চাষ হচ্ছে, সেই মাণ্ডিতেই বেচতে হত।’’
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, আইন সংশোধন করে এখন ‘এক দেশ, এক মাণ্ডি’ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। চাষি এখন থেকে সরাসরি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। আলু চাষি পটেটো চিপস সংস্থার সঙ্গে, ফল চাষি জ্যাম-মোরব্বা-ফলের রস তৈরির সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। মোদী বলেন, ‘‘চাষিরা ফসল বোনার সময় ঠিক করা দামই পাবেন। পরে বাজারে দাম পড়লেও তার আঁচ চাষির গায়ে লাগবে না।’’ কিষাণ সভার মতো কৃষক সংগঠনগুলির অবশ্য অভিযোগ, এতে আখেরে বেসরকারি সংস্থাই লাভবান হবে। তারা চাষিদের শোষণ করবে।