ডেপুটি চেয়ারম্যানের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ডেরেক। ছবি: পিটিআই।
কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত দুটি বিতর্কিত বিল পাশ নিয়ে আজ দক্ষযজ্ঞ হয়ে গেল রাজ্যসভায়। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংসদীয় অধিবেশনের বাকি দিনগুলিতেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রবল আক্রমণাত্মক হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
আজ রাজ্যসভায় যে ভাবে ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়েছে মোদী সরকার, তাতে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজ রাজ্যসভায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক ও খারাপ নজির তৈরি করল। এই ঘটনা গণতন্ত্রের চরম বিরোধী। সরকারের পক্ষে সংখ্যা নেই বলে এই ঘটনা সুস্থ গণতন্ত্রের হত্যা।’’ মমতা তৃণমূল সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে এ নিয়ে নালিশ জানানোর।
মমতার নির্দেশে সংসদে করোনা আবহ এবং সামাজিক দূরত্বের বাধানিষেধের মধ্যেই আজ কার্যত ওয়েলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ অন্যান্য দলীয় সাংসদেরা। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা পরে ওয়েলে নেমে এই বিল পাশের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। প্রথমে ওয়েলে গিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় তৃণমূলের সাংসদ দোলা সেন এবং অর্পিতা ঘোষকে। এর পর আসেন ডেরেক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি রুল বুক ছিঁড়েছেন এবং মাইক্রোফোন ভেঙে দিয়েছেন। ডেরেকের কথায়, ‘‘আমার দলনেত্রী কৃষকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদে ২৬ দিন অনশন করেছিলেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নেত্রী এই বিষয়টি নিয়ে যতটা লড়েছেন, আজ আমরা তো তার কিছুই করিনি।’’ এক সময় ধস্তাধস্তিতে তাঁর পা কেটে গিয়েছে বলেও পরে অভিযোগ করেন ডেরেক।
ডেরেকের বক্তব্য:
এর আগেই কৃষি সংক্রান্ত এই বিল সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল তৃণমূল। আজ মমতা বলেন, ‘‘কোভিডের জন্য এমনিতেই মানুষের রুটিরুজিতে ধাক্কা লেগেছে। তার উপরে এই সিদ্ধান্তের ফলে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ কৃষি পণ্য মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কৃষকদের উপরে ধাক্কা তো আসবে, সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য কত দামে পৌঁছে যাবে, তা নিয়ে ভয় হচ্ছে।’’ ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহের বিরুদ্ধে ১২টি বিরোধী দল যে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে, তাতে সই করেছে তৃণমূলও।
আরও পড়ুন: জোড়া কৃষি বিল নিয়ে তুলকালাম বিরোধীদের, রণক্ষেত্র রাজ্যসভা
আরও পড়ুন: উমর কোনও অন্যায় করেনি, বলছেন মা সাবিহা
তৃণমূলের বিরুদ্ধে আজ সরব হয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারা। বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার টুইট করে বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের সাংসদেরা অসভ্যতা করেছেন রাজ্যসভায়।’’ ‘আইন অমান্য’ করা বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রস্তাব নিয়ে কথা হচ্ছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় স্তরেও। বিষয়টির নিন্দা করে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ সরকারের মন্ত্রীরা সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। অভিযোগ, রুল বুক ছেঁড়া এবং ডেপুটি চেয়ারম্যানের দিকে ধেয়ে যাওয়া ঘোরতর সংসদীয় অবমাননা। ডেরেকের বক্তব্য, ‘‘ওরা যদি এমন ফুটেজ দেখাতে পারেন যে, আমি রুল বুক ছিঁড়েছি, তা হলে আজই সাংসদ পদে ইস্তফা দেব। বাবা ৪৫ বছর প্রকাশন সংস্থায় কাজ করেছেন। বই আমাদের কাছে ঈশ্বরের মতো।’’