ডেপুটি চেয়ারম্যানের চেয়ারের সামনে ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: পিটিআই
কৃষি বিল পাশ ঘিরে তুলাকালাম রাজ্যসভায়। বিরোধীদের প্রবল হট্টগোল, বিক্ষোভের মধ্যেই রুল বুক ছেঁড়া ও ডেপুটি চেয়াম্যানের মাইক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল ডেরেক ও'ব্রায়েনের বিরুদ্ধে। যদিও পরে সংসদের বাইরে অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, এমন হলে তিনি সাংসদ পদ থেকেই ইস্তফা দেবেন। ডেরেকের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’’ বিষয়টিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু হস্তক্ষেপ করতে চলেছেন বলে সংসদ সূত্রে খবর। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। একাধিক টুইটে ডেরেককে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও।
কৃষি বিল ঘিরে রবিবার গোড়া থেকেই তপ্ত ছিল রাজ্যসভা। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল কার্যকর হলে কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন না। ‘কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলে বিলের বিরুদ্ধে অধিবেশনেই সরব হয় কংগ্রেস। ওয়েলে নেমে ধর্নায় বসেন সাংসদরা। শুরু হয় তুমুল হইচই, স্লোগান, বিক্ষোভ। তার মধ্যেই ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গিয়েছে কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত দু’টি বিতর্কিত বিল। সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ। বিক্ষোভ চলাকালীন কয়েক জন বিরোধী সাংসদ ডেপুটি চেয়ারম্যানের চেয়ারের কাছে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ, সেই সময়ই ডেপুটি স্পিকারের সামনে রুল বুক ছিঁড়ে দেন ডেরেক। তিনি মাইকও ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
যদিও ডেরেকের দাবি, তিনি যে রুল বুক ছেঁড়েননি, তার প্রমাণ যথাসময়ে দেবেন। সংসদের সেন্ট্রাল হল থেকে একটি ভিডিয়ো শুট করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কিছু বার্তা দেন ডেরেক। পরে অন্য একটি ভিডিয়ো বার্তায় সেন্ট্রাল হলের ওই ভিডিয়ো ব্যবহার না করার আর্জি জানান তিনি। দ্বিতীয় ওই ভিডিয়োতে তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যসভা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যসভায় কী ঘটেছে, আমাদের কাছে তার ভিডিয়ো ফুটেজ আছে। সাংসদরা ভোটাভুটির দাবি করেন। কিন্তু তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এটা অভূতপূর্ব। এটা খারাপ অর্থে ঐতিহাসিক দিন।’’
ডেরেকের বক্তব্য:
আরও পড়ুন: তুমুল অশান্তির মধ্যেই রাজ্যসভায় পাশ জোড়া কৃষি বিল
রুল বুক ছেঁড়ার অভিযোগ নিয়ে ডেরেক বলেন, ‘‘এই ধরনের মিথ্যে সাজানো ঘটনা ছড়াবেন না। বের করে দেওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের কাছে সব ছবি আছে। ছবি তুলতে বাধ্য হয়েছেন সাংসদরা।’’ ডেরেক আরও বলেন, ‘‘ভোটাভুটি চেয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু বিজেপির প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকায় তা করেনি। বিজেপি বলছে, এটা ঐতিহাসিক দিন। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা দুঃখের দিন।’’
প্রশ্ন উঠেছে সংসদের ভিতরে ভিডিয়ো তোলা নিয়েও। যদিও বিরোধীদের দাবি, অধিবেশন কক্ষে ঠিক কী কী ঘটছে, তার প্রমাণ রাখতেই তাঁরা ভিডিয়ো শুট করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পডু়ন: ‘কৃষক বিরোধী’, কৃষি বিল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব দিলজিৎ দোসাঞ্জ-সহ পঞ্জাবের শিল্পীরা
বিরোধীদের এই রকম আচরণের তীব্র সামলোচনা করেছে শাসক দল। আলাদা করে কারও নাম উল্লেখ না করে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী সংসদের বাইরে বলেন, ‘‘অসহনশীলতার চরম নজির রেখেছেন বিরোধীরা। ওঁরা নিজেদের বাদশা ভাবছেন। এই ধরনের অভব্য আচরণের তীব্র নিন্দা করি। ওঁদের হুমকির কাছে মাথা নোয়াব না আমরা।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য সরাসরিই ডেরেককে আক্রমণ করেছেন। রাজ্যসভা টিভি থেকে অধিবেশন কক্ষের ওই সময়ের ভিডিয়ো শেয়ার করে বাবুলের কটাক্ষ, সবচেয়ে কঠিন শব্দও এই আচরণের নিন্দার পক্ষে যথেষ্ট নয়।
অন্য দিকে সংসদ সূত্রে খবর, বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে চলেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারম্যান।