মোহন ভাগবত।
প্রার্থনা বেদির দিকে এগোচ্ছিলেন বাপু। পথ আগলে দাঁড়াল নাথুরাম গডসে। পরপর তিনটি গুলি। লুটিয়ে পড়লেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। আজ দিল্লির সেই বাড়িটির নাম ‘গাঁধী স্মৃতি’।
রাহুল গাঁধীরা অভিযোগ করেন, বিজেপি-আরএসএস গডসে-ভক্ত। ‘গাঁধী স্মৃতি’র সেই বেদির পাশেই আজ গাঁধীকে নিয়ে বই প্রকাশ করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। বইয়ের নাম ‘গাঁধীকে বোঝার এটিই সময়।’ কংগ্রেসের থেকে বাপুকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ভাগবত বলেন, ‘‘গাঁধী নিজেই অনেক বার বলেছেন, তিনি কট্টর সনাতনী হিন্দু।’’
ভাগবতের কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের হাত ধরে গাঁধীর ভারত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ থেকে বিশ বছর পর গাঁধী জয়ন্তীতে নিশ্চয়ই বলতে পারব, বাপু আপনি চলে গিয়েছিলেন, এখন ফিরে এসে শান্তিতে থাকুন।’’ গাঁধীকে নিয়ে বইটি লিখেছেন জগমোহন সিংহ রাজপুত। বাজপেয়ী সরকারের সময় যিনি এনসিইআরটি-র প্রধান ছিলেন। সেই সময়েই শিক্ষায় গেরুয়া ছাপের অভিযোগ উঠেছিল। ১৪২ পাতার বইয়ের পরতে পরতে বোঝানোর চেষ্টা, গাঁধীর আসল ঐতিহ্য বহন করছে সঙ্ঘ পরিবারই। জীবদ্দশায় সঙ্ঘের কাজে খুশি হয়েছিলেন গাঁধী।
এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে বলা হয়েছিল সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপকে। যিনি বক্তৃতায় নাম না-করে বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদীকে। বললেন, ‘‘লাল কেল্লা থেকে স্বচ্ছতার ডাক দেওয়া হচ্ছে, ভাল। কিন্তু রাজনীতিতে স্বচ্ছতা কবে হবে? রাজনেতার জীবন সাদামাঠা, ত্যাগ-সেবার হতে হবে। জাঁকজমকে চলা নেতা মোগলের থেকে কম নয়।’’ লোকসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল মোদী জমানায় নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির ভিতরে আর একটা দিল্লি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। হাজার কোটি টাকা দিয়ে সংসদ ভবন, নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে। কোটি কোটি গরিবের দেশে জনতার টাকা দিয়ে! বর্তমান সংসদ ভালই আছে। এঁরা নতুন সংসদ, তাজমহল গড়ে খুশি হবেন? এ সব গাঁধীর ভাবনার বিপরীত।’’ পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ বক্তা ভাগবত গোড়াতেই শোনান, সরকারের নীতির সমালোচনা তিনি করছেন না। বলেন, ‘‘কুড়ি বছর আগে বলতাম, গাঁধীর কল্পনার ভারত আজ নেই। ভবিষ্যতে হবে কি না, জানি না। আমার তো অসম্ভব মনে হত। কিন্তু আজ বলতে পারি, সে ভারত আজ না থাকলেও বিশ বছর পর সম্ভব।’’