‘খেলো ইন্ডিয়া’-র উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি—পিটিআই।
গুলতি কেবল গুলতি নয়, বরং বিজ্ঞান শেখার হাতেখড়ি। ঠিক তেমনই লাট্টু। যা অভিকর্ষজ বল সম্পর্কে অজানতেই ধারণা তৈরি করে দেয় শিশু মস্তিষ্কে। দেশীয় চিরাচরিত খেলনা কেবল আনন্দ দেওয়ার জন্য নয়, শিশুদের বিজ্ঞানের প্রথম পাঠ শেখানোর প্রশ্নেও কার্যকর বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া টয় ফেয়ার ২০২১’-এর উদ্বোধন করে বিশ্বের বাজার ধরতে আরও বেশি করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে খেলনা তৈরি করার উপরে জোর দেন তিনি।
আজ নিজের বক্তব্যে খেলনা ও বিজ্ঞানের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। উদাহরণ হিসেবে বেছে নেন লাট্টু-গুলতির মতো অতি-পরিচিত সাধারণ খেলনাকে। মোদী বলেন, ‘‘একটি শিশু যখন লাট্টু নিয়ে খেলে, তখন তার মধ্যে একদিকে ভারসাম্য বা সমতা সম্পর্কে ধারণা হয়, তেমনই অভিকর্ষজ বলের সঙ্গে ছোট বয়স থেকেই পরিচিত হয় তারা। গাছ থেকে ফল-পাকুড় পেড়ে আনার জন্য গুলতির ব্যবহার শেখায়, কী ভাবে স্থিতিশক্তি নিমেষে গতিশক্তিতে পরিবর্তিত হয়।’’ মোদীর দাবি, বিভিন্ন ধরনের পাজ়ল ও ধাঁধা বুদ্ধি বিকাশের সঙ্গে সেই শিশুর রণনৈতিক চিন্তাধারাকে শক্তিশালী করে। মোদীর কথায়, ‘‘প্রতিটি খেলনা থেকেই বিজ্ঞানের কোনও না কোনও শিক্ষা পাওয়া সম্ভব। একেবারে ছোট শিশুদের মাথার ঘুরতে থাকা ঝুনঝুনি সেই শিশুকে বৃত্তাকার গতি বা ঘূর্ণন সম্পর্কে অবচেতন মনে ধারণা তৈরি করে দেয়।’’
আজকের ওই ভার্চুয়াল প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা প্রায় হাজার খানেক প্রদর্শনকারী। সেই মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে ভারতের খেলার সামগ্রী কী ভাবে অতীত দিন থেকে বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে, তার উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানের জনপ্রিয় খেলা দাবা বা লুডো আবিষ্কার হয়েছে ভারতে। বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থেও রাম ও কৃষ্ণের ছোটবেলার নানা ধরনের খেলনার উল্লেখ রয়েছে। আগামী দিনে বিশ্বের খেলনার বাজার ধরতে কেন্দ্র তৎপর বলেও দাবি করেন মোদী। তিনি বলেন, ভারতীয় খেলনা শিল্প যাতে আত্মনির্ভর ও বিশ্বের খেলনা বাজারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উঠতে পারে, তার জন্য ১৫টি মন্ত্রক মিলে একটি জাতীয় খেলনা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে সরকার। কেন্দ্রের লক্ষ্য হল, দেশীয় খেলনা শিল্পকে চাঙ্গা করে বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেওয়া।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনের খেলনার রমরমা হলেও সে দেশে তৈরি খেলনায় নিষিদ্ধ রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকায় বহু দেশ চিনা খেলনার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। ভারতের কাছে খেলনার প্রশ্নে তাই আত্মনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বাজার ধরতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খেলনা তৈরিতে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব ও প্লাস্টিকবিহীন পদার্থ ব্যবহার নিয়েও সওয়াল করেন মোদী। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তিনি হাতে বানানো খেলনাকে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আনার প্রশ্নে জোর দেন। মোদী বলেন, ভারতের কাছে প্রযুক্তি ও ঘরানা রয়েছে। যার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে পরিবেশবান্ধব খেলনা জোগাতে সক্ষম ভারত।