নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর টুইট এলেই আজকাল অনেকে ভাবেন, এ বারে নতুন কী হেঁয়ালি? আজ দুপুরে আবারও টুইট এল নরেন্দ্র মোদীর। তাতে লিখলেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, জমায়েত কমানোর। যাতে করোনাভাইরাস রোখা যায়। সে কারণেই এ বছর আমি স্থির করেছি, কোনও হোলি-মিলন অনুষ্ঠানে শামিল হব না।’’ টুইট করে একই কথা জানিয়েছেন বিজেপির অন্য নেতা-মন্ত্রীরা, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী
যোগী আদিত্যনাথ।
সাধারণত পশ্চিমবঙ্গে যে দিন দোল উৎসব পালন হয়, তার পরের দিন উত্তর ভারতে ধুমধাম করে পালন হয় ‘হোলি’। এ বছর হোলি সামনের সপ্তাহের মঙ্গলবার। কিন্তু ‘হোলি’তে প্রধানমন্ত্রীর শামিল না-হওয়ার ঘোষণায় বিজেপিরই অনেকে বিস্মিত হন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদীকে কোনও ‘হোলি’তেই বড় কেন, কোনও ছোট জমায়েতেও শরিক হতে দেখেননি। অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীর জমানায় তাবড় তাবড় বিজেপি নেতারা হোলির উৎসবে মাততেন। মোদীও কখনও-সখনও যোগ দিয়েছেন সেখানে। কিন্তু দিল্লি আসার পর নিজে আয়োজন করেননি।
তা হলে এই টুইটের মানে কী? উত্তর এল কিছু ক্ষণ পরেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও টুইট করে জানালেন, ‘‘আমাদের ভারতীয়দের ক্ষেত্রে হোলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বছর কোনও হোলি-মিলন অনুষ্ঠানে শামিল হব না। সকলকে আবেদন করছি, প্রকাশ্য জমায়েত এড়িয়ে চলুন। নিজের ও পরিবারের খেয়াল রাখুন।’’ ঠিক একই ভাষায় টুইট এল বিজেপির নতুন সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডারও। তিনি বিজেপির সব রাজ্য সভাপতিকেও একই আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখছেন।
আরও একটু পর করোনাভাইরাস নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে আসেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তিনিও বললেন, ‘‘আমিও এ বারে হোলি পালন করব না। করোনাভাইরাস আর দিল্লির হিংসার কারণে। মানুষ এখন অনেক যন্ত্রণায় আছেন। আমার মন্ত্রী, বিধায়করাও হোলিতে মাতবেন না।’’ বার্তা স্পষ্ট, বিজেপির শীর্ষ নেতা থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী— সকলেই যেন অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর টুইটের। তিনি টুইট করলেই বাকিরা একই বিষয় ঘোষণা করবেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না-ছড়ায়, সেই যুক্তিতে হোলির উৎসব হবে না রাষ্ট্রপতি ভবনেও।
কিন্তু কেন?
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বললেন, ‘‘কারণ দু’টি। করোনাভাইরাস এবং সম্প্রীতি রক্ষা। যে ভাবে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাতে এধরনের জমায়েত বিপদ বাড়াতে পারে। ফলে সেটি এড়ানোই মঙ্গল। আর হোলির আড়ালে
সম্প্রীতি নষ্টের চক্রান্তের আভাস রয়েছে। সে কারণে দিল্লির হিংসা নিয়ে সংসদের বিতর্কও হোলি পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীর্ষ স্তর থেকে হোলি না-খেলার আবেদন জানানো হচ্ছে। যাতে বিপদ এড়ানো যায়। এটি জানা সত্ত্বেও হোলির সামগ্রীর বিক্রি কমলে ব্যবসা মার খাবে। আবার ‘হিন্দু উৎসব’ পালনে বারণ করাও সহজ কাজ নয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে।
তাই ‘করোনা-আতঙ্ক’কে সামনে রাখলেন তিনি।