প্রতীকী ছবি।
ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিভিন্ন অংশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও তাঁরকাটার বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ হয়নি। রইস্যাবাড়ী এলাকায় প্রায় ৩৮ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া নেই। অভিযোগ, ওই ঘন জঙ্গল এলাকায় বিএসএফের নজরদারি ঠিক মতো থাকে না বলে সাধারণ গ্রামবাসী থেকে শুরু করে জঙ্গিরাও সীমান্ত পারাপার করছে৷ এই ধলাই জেলার বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার দুরত্ব খুবই কম হওয়ায় খুব সহজেই অপহরণ করে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া যায়৷ এই সব কারণে ধলাই জেলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে সম্প্রতি জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গন্ডাছড়া এলাকার বোয়ালখালি গ্রামের বাসিন্দা থরনজয় ত্রিপুরা লঙ্কার বীজ আনার জন্যে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি গত কাল তাঁকে আটক করে৷ তার পর ফ্ল্যাগ মিটিং করে থরনজয়কে তারা বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছে৷ এর পর তাঁকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে৷
এর কয়েক দিন আগে ধলাই জেলার গন্ডাছড়ায় রক্ত শান্তি চাকমা নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে বিএসএফ। রইস্যাবাড়ী থানা এলাকায় সীমান্তের ২২৬৪/৩এস পিলারের এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারতে ঢোকেন তিনি৷ টহলরত বিএসএফ জওয়ানরা তাঁকে আটক করেন৷ তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশি টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র মিলেছে। বিএসএফ তাঁকে রইস্যাবাড়ী থানায় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে৷ থানার আধিকারিক সুলেমান রিয়াং জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রাঙামাটি এলাকার বলি গ্রামের বাসিন্দা৷ গত ৯ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে প্রবেশের মামলা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশি ওই ব্যক্তি বর্তমানে গন্ডাছড়া জেলে৷ কী কারণে তিনি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন তা জানার চেষ্টা চলছে।
রুটি-রুজির কারণে কাঁটাতারহীন সীমান্ত পারাপার এক রকম। কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে অপহরণ ও অন্যান্য জঙ্গি কার্যকলাপ। গত ৭ ডিসেম্বর ধলাই জেলারই আমবাসা মহকুমায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তৈরিতে নিযুক্ত তিন জনকে অপহরণ করেছে জঙ্গিরা। এখনও তাঁদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। দু’দিন আগে কমলপুর মহকুমার সালেমা থানার অন্তর্গত মালিরায় পাড়ায় বিদ্যুতের টাওয়ার নির্মাণে নিযুক্ত শ্রমিকদের অপহরণ করার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। এক জন শ্রমিকের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে গ্রামের সবাই টের পেয়ে যান। তাতে অপহরণের ছক ভেস্তে যায়।
পুলিশের একাংশের সন্দেহ, আমবাসা মহকুমায় অপহৃত তিন জনকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকতে পারে। বিএসএফের সিন্ধুকুমার পাড়া শিবিরের উল্টো দিকে বাংলাদেশের পানছড়ি উপজেলার নাগপট্টিতে ১৫ থেকে ১৬ জন জঙ্গির একটি দল রয়েছে বলেও তাদের সন্দেহ। ওই জঙ্গিদের কাছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে বলেও সূত্রের খবর। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের উঁচু মহলের কর্তারা কেউ মুখ খুলছেন না এখনও। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। সন্ত্রাসবাদীদের প্রশ্নে বারবারই কঠোর হয়েছে ও ভারতের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। জঙ্গিরা বাংলাদেশে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলে, তাদের উৎখাত করার প্রশ্নে এ বারও সে দেশের সহযোগিতা মিলবে বলেই আশা করা হচ্ছে।