Sambhal

সম্ভলকাণ্ড: অশান্তির এক সপ্তাহ পরে এলাকায় বিচার বিভাগীয় কমিটি, পরিদর্শন করল স্পর্শকাতর অঞ্চল

উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে অশান্তি ছড়ানোর পর তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল। রবিবার ওই কমিটির দুই সদস্য সম্ভলের অশান্তি ছড়ানো এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৩
Share:

রবিবার সম্ভলে এলাকা পরিদর্শনে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটির সদস্যেরা। ছবি: পিটিআই।

সম্ভলকাণ্ডে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি রবিবার এলাকা পরিদর্শনে যায়। অশান্তি ছড়ানো অঞ্চলগুলির বাস্তব চিত্র সরেজমিনে দেখেন তাঁরা। রবিবারের পরিদর্শক দলে ছিলেন কমিটির নেতৃত্বে থাকা ইলাহাবাদ হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দেবেন্দ্রকুমার অরোরা এবং অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা অরবিন্দকুমার জৈন। তবে কমিটির তৃতীয় সদস্য অবসরপ্রাপ্ত আমলা অমিতমোহন প্রসাদ রবিবারের পরিদর্শনে ছিলেন না। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে শাহি জামা মসজিদে সম্প্রতি সমীক্ষার নির্দেশ দেয় সে রাজ্যের নিম্ন আদালত। এর পরে গত রবিবার সম্ভলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। গোলমালের মাঝে একাধিক মৃত্যুও হয়। সেই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে সম্ভলে এলাকা পরিদর্শনে গেল বিচার বিভাগীয় কমিটি।

Advertisement

সম্ভলে অশান্তি ছড়ানোর পর থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার বিচার বিভাগীয় কমিটির পরিদর্শনের সময়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। কমিটির দুই সদস্যের সঙ্গে ছিলেন, মোরাদাবাদের ডিভিশনাল কমিশনার অঞ্জনেয়কুমার সিংহ, ডিআইজি জি মুনিরাজ, সম্ভলের জেলাশাসক রাজেন্দ্র পেনসিয়া এবং পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার। পরিদর্শনের সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কমিটির সদস্যেরা। পরে ডিভিশনাল কমিশনার জানান, যে সব অঞ্চলে অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেই জায়গাগুলি পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যেরা। কয়েক জন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেন। পরে আবারও এলাকা পরিদর্শনে আসবে এই কমিটি। শাহি জামা মসজিদের ইমাম আফতাব হুসেন ওয়ারসি জানিয়েছেন, কমিটির সদস্যেরা প্রায় মিনিট পনেরো মসজিদে ছিলেন। তবে কমিটি রবিবার কারও বয়ান সংগ্রহ করেনি বলেই জানান মসজিদের সচিব মাসুদ ফারুকি।

ডিভিশনাল কমিশনার জানান, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে পুলিশ। অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সম্ভলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তবে তার পর থেকে কারও প্রবেশে কোনও বাধা থাকবে না বলেও পিটিআইকে জানিয়েছেন ডিভিশনাল কমিশনার।

Advertisement

গোলমালের সূত্রপাত সম্ভলের এক নিম্ন আদালত দায়ের হওয়া মামলাকে কেন্দ্র করে। মসজিদ তৈরির আগে সেখানে একটি মন্দির ছিল বলে দাবি করেন মামলাকারী। সেই মামলায় গত ১৯ নভেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারক মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দেন। গত শনিবার প্রথম দিনের সমীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে গত রবিবার দ্বিতীয় বার সমীক্ষার সময়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শাহি মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার নির্দেশের বিরোধিতা করে মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানান।

শাহি মসজিদ কমিটির দাবি, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধুমাত্র অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাধীনতার আগে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে। এই নীতি মেনে চললে, কোনও মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষার প্রশ্নই ওঠে না।

সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে এই মসজিদ সমীক্ষায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সম্ভলের গোলমাল প্রসঙ্গে বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানিয়েছে, শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। আপাতত সমীক্ষা নিয়ে কোনও নির্দেশ দিতে পারবে না নিম্ন আদালত। মসজিদ কর্তৃপক্ষকে সমীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন জানাতে হবে হাই কোর্টে। হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু না হওয়া পর্যন্ত, সমীক্ষা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement