লিভিং রুট ব্রিজ। এ এক আসাধারণ প্রাকৃতিক বিষ্ময়। মেঘালয়ের খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের জঙ্গলগুলিতে এই সেতুর দেখা মেলে। এই সেতুগুলি সংরক্ষণের জন্য পূর্ব খাসি এলাকার বাসিন্দা নিয়েছেন এক অনন্য পদক্ষেপ। কে ইনি? কী ভাবে এই সেতু সংরক্ষণের কাজ হয়? দেখে নেওয়া যাক।
মর্নিংস্টার খোংগথো। পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার পিনুরসলা তহসিলের রাঙ্গিথালিয়া গ্রামের বাসিন্দা, মর্নিংস্টার একজন লিভিং ব্রিজ অ্যাক্টিভিস্ট। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এই জীবন্ত সেতুগুলি সংরক্ষণ ও নয়া সেতু নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
একজন সেতু সংরক্ষণকারি হিসেবে, তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যান এবং সেখানকার মানুষকে প্রকৃতির তৈরি এই ঐতিহ্যের মূল্য বুঝতে সাহায্য করার পাশাপাশি কী ভাবে এই সেতু সংরক্ষণ করা যাবে তাও বোঝান।
মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিলস এবং জয়ন্তিয়া হিলস জেলায় জঙ্গলগুলিতে প্রাকৃতিক নিয়মেই ফিকাস এলাস্টিকা গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি হয় এই লিভিং রুট ব্রিজ। বাংলাদেশ সীমান্তের দক্ষিণী ঢালে বসবাসকারী খাসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই সেতুগুলিকে তাঁদের নিয়মিত ব্যবহার, পণ্য পরিবহণের যোগ্য করে তুলেছেন।
রুট ব্রিজগুলি কোনও নদী বা প্রবাহ সংলগ্ন এলাকার ওপর, বাঁশ বা অরকা বাদাম গাছের হোল্ডেড আউট ট্রাঙ্কগুলির একটি পরিকাঠামো তৈরি করতে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দেন মর্নিংস্টার। তাঁর মধ্যে দিয়ে ফিকাস এলাস্টিকা গাছের শিকড়গুলি গিয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রতি দুই বছর অন্তর আর্দ্র ও স্যাঁতসেতে আবহাওয়ার কারণে এই পরিকাঠামো পাল্টে ফেলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই সেতু তৈরিতে ১৫ বছর সময় লাগলেও ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে এই সেতুর শিকড়গুলির যত্ন নেওয়া হয়, যাতে সেটি মানুষের ভার বইতে পারে। কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ জন দিনে এই সেতুটির উপর দিয়ে যেতে পারে।
এই ব্রিজগুলি গড়ে ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার মাওকিরনোট গ্রামের কাছে অবস্থিত রাজ্যের দীর্ঘতম রুট ব্রিজটি ১৭৫ ফুট লম্বা।
মর্নিংস্টারের মতে, “ঠিক মতো যত্ন নেওয়া গেলে (যা শিকরগুলিকে বাড়তে সাহায্য করবে) এই সেতুগুলি কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ বছর স্থায়ী হবে।”
২০১৬ সালে এই সেতু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, ২০১৮ সালে মর্নিংস্টার 'লিভিং ব্রিজ ফাউন্ডেশন' (এলবিএফ)-এর শুরু করেন। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১০।
গ্রামের সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে মর্নিংস্টার সেতু সংরক্ষণের প্রধান কাজগুলি করে থাকেন।
গত বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং এই বছর পৃথিবী দিবসে এলবিএফ-এর সদস্যরা বাঁশ দিয়ে পরিকাঠামো গড়ে দু’টি সেতু নির্মাণ করেছেন। ২০ বছরে এই সেতু দু’টি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেতু ছাড়াও, মর্নিংস্টার জঙ্গলের মধ্যে সিঁড়ি, বসার জায়গা, টানেল নির্মাণের জন্যও এই কৌশল নেওয়া শুরু করেছেন।
১৮ মার্চ ২০১৯, শিলং-এর নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটি তাদের একটি সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়। শুধু তাই নয়, পশ্চিম গারো হিলের জেলা প্রশাসন তাঁকে একটি অঞ্চলে রাবার গাছ পরিদর্শন ও সেখানকার মানুষ কী ভাবে এই সেতু নির্মাণ করবেন তা শেখানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।