দেবেন দত্ত
যোরহাটের টিয়োক চা বাগানে শ্রমিকদের হাতে চিকিৎসক দেবেন দত্ত খুন হওয়ার প্রতিবাদে উজানি অসমের বাগানগুলির মেডিক্যাল অফিসারেরা একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। ওই ঘটনার নিন্দা করে আলফা স্বাধীন বাগানে রাজনীতি করে খায়া লোকজনকে নিশানা করে হুমকি দিয়েছে, চা শ্রমিকদের হিংস্র ব্যবহারে রাশ টানা না-হলে আলফাই তাদের শাস্তি দেবে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে আছেন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও। চলছে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত। বাগানটি লক আউট ঘোষণা করেছে অ্যামালগামেটেড কর্তৃপক্ষ। বাগানটি খোলার জন্য আবেদন জানিয়েছে মজদুর সঙ্ঘ।
দেবেনবাবুর সঙ্গে হওয়া ঘটনার প্রতিবাদে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অসম শাখা চা অ্যাসোসিয়েশনের অসম শাখাকে চিঠি দিয়ে দাবি করেছে, সব চা বাগানের হাসপাতালের বসাতে হবে সিসিটিভি, দিতে হবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী। ৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি মানার লিখিত প্রতিশ্রুতি না-পেলে ৬ সেপ্টেম্বর সব বাগান থেকে চিকিৎসকদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
দেবেনবাবুর হত্যার নিন্দা করে এ দিন অসম চা শ্রমিক ছাত্র সংগঠনের ডাকে যোরহাটের সব বাগানে এক বেলার কাজ বন্ধ রাখা হয়। অসম চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট সংস্থাও রাজ্যে জরুরি পরিষেবা বাদে অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদে শামিল হয়। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিবেক গোয়েঙ্কা ঘটনার নিন্দা করেন। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাংসদ শান্তনু সেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল আজ যোরহাটে আসেন। প্রতিনিধিদলের সদস্য আর এন টন্ডন জানান, আজ প্রয়াত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁরা। দেখা করেছেন, জেলাশাসক রোশনি অপরাঞ্জি করাতি ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গেও। সব চা বাগানে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দেবেনবাবুর হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন।
চিকিৎসক দেবেনবাবুর হত্যার প্রতিবাদে ও নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে আজ যোরহাটের নিউ সোনোয়াল বাগান, ভেলাগুড়ি বাগান ও কাকোজান বাগানের তিন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। ইস্তফা দেন ডিব্রুগড় চা বাগানের মেডিক্যাল অফিসার রবি বরুয়া ও নুমলিগড় চা বাগানে মেডিক্যাল অফিসার অজয় কটকি। রবি বরুয়া লেখেন, সব চা বাগানের মেডিক্যাল অফিসারেরা গণইস্তফা দিয়ে প্রতিবাদে শামিল না-হলে চা মজদুর সঙ্ঘের ঘুম ভাঙবে না। তারা বরাবর একতরফা ভূমিকা নেয়। শ্রমিকদের আচরণ সংযত না-করে, উল্টে প্রশ্রয় দিচ্ছে সঙ্ঘ।
চা মজদুর সঙ্ঘের সভাপতি রূপেশ গোয়ালা বলেন, ‘‘খারাপ-ভাল সব শ্রেণিতে আছে। টিয়োক বাগানের চারটে বড় ডিভিশন। একটি ডিভিশনে শ্রমিকদের জন্য সকলকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। বাগানের ৫০% হাসপাতালে ডাক্তার নেই। পরিকাঠামোও ভাল নয়। তাই ক্ষোভ থাকেই।’’ আলফা স্বাধীন জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান পরেশ বরুয়া বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘অসমিয়া সমাজের অঙ্গ হিসেবে চা জনগোষ্ঠীকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বারবার এমন হিংস্র, অমানবিক আচরণ করছে।’’