দিল্লি বোর্ডের পাঠ্যবই থেকে ‘বাদ’ দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর নাম! ফাইল চিত্র।
সিলেবাসে পরিকল্পিত কাটছাঁটের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছিলই। এই আবহে এনসিইআরটি-র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবই থেকে বাদ গেল মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নাম! দিল্লি বোর্ডের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা নতুন শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যে বই হাতে পেয়েছেন, তাতে কোথাও নেই আজাদের নাম। অথচ পড়ুয়াদের তরফেই জানা গিয়েছে, ওই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ‘সংবিধান— কেন এবং কী ভাবে’ শীর্ষক পর্বের শুরুতেই লেখা থাকত সংবিধান সভার বিভিন্ন সমিতির বৈঠকে সচরাচর উপস্থিত থাকতেন জহরলাল নেহরু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং বিআর অম্বেদকর। কিন্তু পরিমার্জিত সংস্করণে সবার নাম থাকলেও নেই আজাদের নাম। এমনকি ওই বইয়ের অন্য একটা অংশে কাশ্মীরের ভারতভুক্তির শর্ত হিসাবে যে রাজ্যটির স্বশাসন মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা-ও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত এনসিইআরটি কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি এনসিইআরটির পাঠ্যবই থেকে মোগল ইতিহাস এবং গান্ধীহত্যার প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াসকে অনেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যে ভাল ভাবে নেয়নি, সেই অংশটিও বাদ গিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, অতিমারিকালে পড়ুয়াদের উপর অতিরিক্ত চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। পড়ুয়াদের বিকৃত ইতিহাস পড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, এই অভিযোগেও সরব হয়েছেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে ‘দি হিন্দু’কে ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব বলেন, “স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে আজাদ বিনামূল্যে দেশের সব পড়ুয়াকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। গণপরিষদ বা সংবিধান সভার একাধিক আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন আজাদ। তাই পাঠ্যবই থেকে তাঁর নাম বাদ পড়াটা দুর্ভাগ্যজনক।” সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য ২০০৯ সালে চালু হওয়া আজাদ বৃত্তিও যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রবীণ ইতিহাসবিদ হাবিব।