প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
‘বুকের ছাতি ৫৬ ইঞ্চি। অন্ধ ও বধির। শেষ বার দেখা গিয়েছিল নির্বাচনের সময়ে’। মণিপুরে দেড় মাস ধরে চলা হিংসার পরেও নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে সমাজমাধ্যমে এমনই ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সহস্রাধিক মানুষ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা মণিপুরের বিজেপি সাংসদ রাজকুমার রঞ্জন সিংহের বাড়িতে ফের আগুন লাগায়। রঞ্জন এখন রাজ্যের বাইরে। হামলার সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। এর আগে গত ২৫ মে রঞ্জনের বাড়ি আক্রমণ করেছিল জনতা। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমায় ফোন করেছিলেন। কেন বার বার আমার বাড়ি আক্রান্ত হচ্ছে, জানি না। আমি শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে যথাসাধ্য করছি। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রের তরফে এত বাহিনী পাঠানোর পরেও রাজ্য সরকার পরিস্থিতি সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ।’’ মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কুকিরা বলেছে, ইম্ফলে পুলিশ-প্রশাসনের দুর্গে ঢুকে এমন কাণ্ড ঘটানো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ওই এলাকায় এখন ১০০ জন কুকিও নেই।
মেইতেইদের ছ’টি ছাত্র সংগঠনের প্রশ্ন, ৪০ হাজার কেন্দ্রীয় জওয়ান মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে কুকি জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে? কুকি জঙ্গি নেতারা খোলাখুলি বলছে, তারা বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে। সেই কারণেই কি বিজেপি সরকার নিরুত্তাপ? মেইতেইদের যৌথ মঞ্চের দাবি, কেন্দ্র এর ব্যাখ্যা না দিলে মণিপুরবাসী বিজেপিকে বয়কট করে রাজ্য থেকে উৎখাত করবে। সব মিলিয়ে ঘরে-বাইরে চাপে বিজেপি।
চূড়াচাঁদপুরের কাংভাইতে মেইতেইদের আক্রমণ শুরু হয়েছে কুকি গ্রামগুলিতে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের মতে, এই সংঘর্ষের পিছনে মূল দায়ী অনুপ্রবেশকারী ও সশস্ত্র জঙ্গিরা। প্রতিবেশী মিজোরামের শাসক দল এমএনএফ ও বৃহত্তর মিজোরামের দাবি তোলা জোরো মঞ্চের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘বাইরের মদতেই মণিপুরে অশান্তি থামছে না। জাতিগত আত্মীয়তা আছে বলেই পাশের রাজ্যে পৃথক প্রশাসনের দাবিতে মদত দেওয়া ঠিক নয়।’’ ১০ বিধায়কের পৃথক রাজ্যের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে যার যা ইচ্ছে দাবি জানাতে পারে। কিন্তু রাজ্যের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’
তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রধান, বিজেপি সাংসদ ব্রজ লালকে চিঠি লিখে মণিপুর সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন। সারা দেশের প্রায় ৫৫০টি সংগঠন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে দাবি তোলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবিলম্বে মুখ খোলা ও পরিস্থিতির দায়িত্ব নেওয়া উচিত। যৌন হিংসার বিচার করা উচিত ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে।