মণিপুর হিংসায় বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফাইল চিত্র।
মণিপুর হিংসা নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। গত বুধবার থেকে উত্তরপূর্বের এই রাজ্যটিতে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যের একাংশে কার্ফু জারি থেকে শুরু করে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, নানা পদক্ষেপ করতে হয়েছে সরকারকে। এই আবহে রাজ্যের হিংসা বিধ্বস্ত পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম বার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জনতার কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
বীরেন জানিয়েছেন, মণিপুরে গত কয়েক দিনে হিংসার বলি হয়েছেন ৬০ জন। তা ছাড়াও, বহু মানুষ আহত। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকের। এই পরিস্থিতির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের রেয়াত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
গত বুধবার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে হিংসার সূত্রপাত। এই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই তফসিলি জনজাতি (এসটি) তকমার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবির বিরোধিতা করে মণিপুরি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর তরফে বুধবার একটি মিছিল বার করা হয়েছিল। সেখান থেকেই সংঘাতের সূচনা। যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
সে দিনের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন একাধিক টুইট করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা নির্দেশ দিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে প্রথম মুখ খুললেন সোমবার। তিনি বলেছেন, ‘‘হিংসায় এখনও পর্যন্ত ৬০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আঘাত পেয়েছেন ২৩১ জন। তা ছাড়া, কমপক্ষে ১৭০০ বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি রাজ্যবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানাচ্ছি।’’
বীরেন আরও বলেন, ‘‘মণিপুরের বিভিন্ন প্রান্তে যাঁরা ঘরছাড়া হয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে আছেন, তাঁদের সব রকম সাহায্য করছে সরকার। তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। আরও ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন।’’
এই পরিস্থিতি জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের চিহ্নিত করতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, যে সরকারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামলাতে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদেরও কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে রাজ্যবাসীর কাছে ভুয়ো খবর, গুজব না ছড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন বীরেন।
মণিপুর হিংসা নিয়ন্ত্রণে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বীরেন জানান, হিংসার প্রথম দিন থেকে শাহ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছেন। এর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিনি কৃতজ্ঞ।