বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত থেকে যে আরও একটি ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত করেই জানিয়েছে মৌসম ভবন। সংশয় ছিল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তার গতিপ্রকৃতি নিয়ে। অবশেষে সেই উত্তরও মিলল।
সোমবার মৌসম ভবন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে মোকা তৈরি হওয়ার পর তা কোন পরিস্থিতিতে, কোন দিকে এগোবে। তবে সবটাই এখনও পূর্বাভাস। ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
মৌসম ভবন সূত্রে খবর, সোমবার সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার সাগরের ওই অংশেই তা গভীর নিম্নচাপের আকার নিতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে আগামী ১০ মে, বুধবারের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ থেকে তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড়। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোকা।’
এই ঘূর্ণিঝড় এর পর ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক বরাবর এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। আগামী ১১ মে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিমেই থাকতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ।
মৌসম ভবন জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবারের পর মোকা দিক পরিবর্তন করবে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে তা আচমকা উল্টো দিতে বাঁক নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের পর মোকা ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে। তা ক্রমশ এগোবে বাংলাদেশ, মায়ানমার উপকূলের দিকে।
সমুদ্রে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কতটা ক্ষয় হবে, তার পর বাংলাদেশ, মায়ানমারের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় তার ধ্বংসলীলা কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট করেনি মৌসম ভবন।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস যদি মিলে যায়, তবে মোকা নিয়ে বাংলায় আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা থাকছে না। তবে সবটাই নির্ভর করবে ঝড় তৈরি হওয়ার পর তার গতিপ্রকৃতির উপর।
পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বে এগিয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমারের দিকে অগ্রসর হতে পারে মোকা, তেমনটাই সোমবার জানিয়েছে মৌসম ভবন।
এ দিকে, ঘূর্ণাবর্ত থেকে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ফলে আন্দামানে ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার এবং মঙ্গলবার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
আন্দামানে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়াও। হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। মঙ্গলবার দুর্যোগ বাড়তে পারে।
আন্দামানে মঙ্গলবার ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ৭৯ কিলোমিটারের কাছাকাছি। সেখানে ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্যটক এবং মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা জারি আছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মোকার আগে বাংলায় আপাতত বৃষ্টির তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী কয়েক দিনে গরম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
বাংলার দক্ষিণের জেলাগুলিতে আগামী কয়েক দিনে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আবার ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁতে পারে।
উত্তরবঙ্গেও দার্জিলিং এবং কালিম্পং ছাড়া আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই আর কোনও জেলায়। উত্তরের জেলাগুলিতে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
কয়েক দিনের বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার পর রাজ্যে আবার বৈশাখের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। সোমবারও কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবহাওয়া মূলত শুষ্কই থাকার সম্ভাবনা বাংলায়। মোকা তৈরি হলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।