মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কলকাতায় বসে জাতীয় রাজনীতির পিচে ‘গুগলি’ ছেড়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই জেরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীনই রাজধানীতে তৈরি হচ্ছে নতুন ভাষ্য। এমনটাই মত রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের।
হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিধ্বস্ত কংগ্রেসের অস্বস্তি আরও বাড়াতে চলতি অধিবেশনে কসুর করছে না তৃণমূল। তার মধ্যে মমতার ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের ভাষ্যকে আজ নানা ভাবে আরও সরগরম করে তুলেছেন তৃণমূল সাংসদরা। গত কাল এনসিপি(এসপি) নেতা শরদ পওয়ারের পর সেই সুর শোনা গিয়েছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র শীর্ষ নেতৃত্বর মুখে।
চলতি অধিবেশনে এসপি-র সঙ্গে আগাগোড়া কক্ষ সমন্বয় চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। এমনকি, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা সংসদীয় কৌশল তৈরির বৈঠকে তৃণমূলের পাশাপাশি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরহাজির থাকছে এসপি-ও। উত্তরপ্রদেশের সম্ভল কাণ্ড নিয়ে এসপি-র সঙ্গে লোকসভায় স্লোগান তুলতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকেও। আজ এই প্রসঙ্গে এসপি-র সহসভাপতি কিরণময় নন্দ বলেন, ‘‘আমরা চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়া’-র মুখ হোন। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র কাছে পরাজিত হয়েছে কংগ্রেস। তারা বিজেপি-কে সামলাতে যে ব্যর্থ তা প্রমাণিত। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি বিধানসভা ভোটেই মমতা সাফল্য পেয়েছেন। ফলে তাঁর মুখকে সামনে রেখে লড়াইয়ে গেলে তা অনেক বেশি জোরদার হবে। আমাদের নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবও সেটাই চান।’’
অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ আজ জানিয়েছেন, এনসিপি-র শরদ পওয়ার-সহ ‘ইন্ডিয়া’র বেশ কিছু নেতা মমতাকে বিরোধী মঞ্চের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ওই তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল ধারাবাহিকভাবে বিজেপি-কে হারাচ্ছে। বিজেপি-কে হারানোর প্রশ্নে তৃণমূলনেত্রীর ট্র্যাক রেকর্ড অতুলনীয়—তা সে একুশের বিধানসভা হোক বা চব্বিশের লোকসভা অথবা সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গের ৬টি বিধানসভা উপনির্বাচন। তাঁর সেই সাহস, দায়বদ্ধতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের ভিতর তৈরি হওয়া সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ঘৃণার রাজনীতির সঙ্গে লড়াই করার। দীর্ঘ তাঁর রাজনৈতিক জীবন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭বারের সাংসদ, ৪ বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ৩ বারের মুখ্যমন্ত্রী। ফলে তাঁর থেকে যোগ্য ব্যক্তি কে আছেন ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার?’’
এই সূত্র ধরেই রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বিশ্লেষণ, ‘‘ইন্ডিয়া-য় তৃণমূলই একমাত্র দল যার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সংযোগ নেই। বাকিদের সবার সঙ্গে কংগ্রেসের কোথাও না কোথাও নির্বাচনী জোট রয়েছে। ফলে ইন্ডিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দল দু'টিই— কংগ্রেস ও তৃণমূল। এ বার এটাও মনে রাখতে হবে বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে, জয়ের হার শতকরা ১০ শতাংশ। তুলনায় তৃণমূলের ক্ষেত্রে এই হার ৭০ শতাংশ। সে কারণেই অনেক বিরোধী দলের প্রবীণ নেতারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়া-র নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য স্বাভাবিক বাছাই।’’
কংগ্রেসের উদ্যোগে আগামিকাল যন্তর মন্তরে মণিপুর নিয়ে প্রতিবাদ ধর্নার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দেবে না তৃণমূল। ওই বৈঠকের জন্য যে চিঠিটি কংগ্রেসের তরফে তৈরি করা হয়েছে তাতে লেখা আছে ‘ইন্ডিয়া ব্লক’ (মণিপুর)। ধর্নাপত্রটি লিখেছেন মণিপুর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি মেঘচন্দ্র সিংহ।