মল্লিকার্জুন খড়্গে, সুখপাল সিংহ খইরা এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল (বাঁদিক থেকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আম আদমি পার্টি (আপ)-র সাংসদ রাঘব চড্ডার সঙ্গে অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়ার বিয়ের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরেই পঞ্জাবের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক সুখপাল সিংহ খইরাকে আট বছরের পুরনো মাদক নিয়ন্ত্রণ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আপ শাসিত পঞ্জাবে পুলিশের বৃহস্পতিবারের ওই পদক্ষেপ ঘিরে নতুন করে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে।
পঞ্জাবের আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে শুক্রবার নিশানা করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সুখপালের গ্রেফতারিকে ‘মানের রাজনৈতিক রক্তস্পৃহা’ বলে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল এই অন্যায় সহ্য করবে না এবং যাঁরা এই অন্যায় করছেন, তাঁরা বেশি দিন রক্ষা পাবেন না।’’ লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের অন্দরে এই সংঘাতের আবহে মুখ খুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা ‘আপ’ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ‘ইন্ডিয়া’র প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা ‘ইন্ডিয়া’ ছাড়ব না।’’
সুখপালের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কেজরীর সাফাই, ‘‘গতকাল পঞ্জাব পুলিশ মাদক মামলায় কংগ্রেসের কোনও বিধায়ককে গ্রেফতার করেছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে পঞ্জাবে মাদক-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। নির্দিষ্ট কোনও মামলার বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’’ কপূরথলা জেলার ভোলাথ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিন বার নির্বাচনে জয়ী সুখপাল গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে আপ ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তার আগে আপ বিধায়ক হিসাবে পঞ্জাব বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদে ছিলেন তিনি।
২০২২-এর বিধানসভা ভোটে পঞ্জাবে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের মধ্যেই পুরনো কেন্দ্র থেকে ‘হাত’ প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন সুখপাল। সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্জাবের যে কংগ্রেস নেতারা ‘আপের’ সঙ্গে সমঝোতার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন, সুখপাল তাঁদের অন্যতম। চলতি সপ্তাহে আর এক ‘আপ’ বিরোধী কংগ্রেস নেতা তথা পঞ্জাব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা প্রতাপ সিংহ বাজওয়া বলেছিলেন, ‘‘আপের ৩০ জন বিধায়ক দল ছাড়তে প্রস্তুত। তাঁরা গোপনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে চণ্ডীগড়ের সেক্টর ফাইভ এলাকায় সুখপালের বাংলোয় অভিযান চালায় জালালাবাদ থানার পুলিশ। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার কারণেই এই গ্রেফতারি। পুলিশি অভিযানের সময়েই সুখপাল ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন। সেখানে তাঁকে পুলিশের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা গিয়েছে। তাঁর পরিবারের এক জন সদস্য পুরো ঘটনাপর্ব রেকর্ড করে ভিডিয়ো সম্প্রচার করেন। সেখানে শোনা গিয়েছে সুখপাল এক পুলিশ আধিকারিককে প্রশ্ন করছেন— ‘‘আপনাদের কাছে কি গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে? কোন অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে?’’
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানে আসন্ন বিধানসভা ভোটে ইতিমধ্যেই একক ভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে ‘আপ’। বেশ কিছু আসনে তারা প্রার্থীও ঘোষণা করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই কেজরীর দলের এই পদক্ষেপ। এই আবহে পঞ্জাবে বিধায়কের গ্রেফতারি দুই দলের সংঘাত আরও তীব্র করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।