মহুয়া মৈত্র। ছবি: পিটিআই।
এথিক্স কমিটির বৈঠকে মহুয়াকে ‘ব্যক্তিগত এবং অনৈতিক’ প্রশ্ন করা হয়েছে। এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেলেন মহুয়া মৈত্র-সহ বিরোধী দলের সাংসদেরা। ‘ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা’র অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার বক্তব্য জানার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বৈঠকের মাঝপথে সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে মহুয়া বলেন, ‘‘এটা কী ধরনের বৈঠক? ওঁরা নোংরা প্রশ্ন করছেন।’’
‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে মহুয়ার বক্তব্য শোনার জন্য তাঁকে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠিয়েছিল সংসদীয় এথিক্স কমিটি। সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মহুয়া-সহ বিরোধী সাংসদেরা। বিরোধী সাংসদদের তরফে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ‘ব্যক্তিগত এবং অনৈতিক’ প্রশ্ন করা হয়েছে। বৈঠক চলাকালীনই এক সাংসদ সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছেন। মহুয়ার অভিযোগ, বৈঠকে তিনি গালে হাত রেখেছিলেন। তা নিয়েও ‘বাজে’ কথা বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সব কিছুই ধরছিলেন। বাজে কথা বলছিলেন। ওঁরা বলেন, ‘আপনার চোখে জল’। আমার চোখে কি জল? আপনারা দেখতে পারছেন?’’ এ দিন এথিক্স কমিটির সামনে মহুয়া যখন উপস্থিত হন, তখন তাঁর পরণে ছিল লাল শাড়ি, হাতে ছিল তিনটি ব্যাগ। যার মধ্যে একটি নামী বিদেশী সংস্থার। অন্য এক বিরোধী সাংসদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা অতিরিক্ত ছিল।’’ মহুয়াকে যে ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিএসপির সাংসদ দানিশ আলি। সূত্রের খবর, মহুয়া রাতে কোন হোটেলে ছিলেন, কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ ধরনের ‘ব্যক্তিগত’ বিষয়েও প্রশ্নও করা হয়েছে।
এথিক্স কমিটির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মহুয়াকে দু’টি প্রশ্ন করা হয়েছে। এক, তিনি ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে সংসদের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন কি না? দুই, বিদেশ থেকে মোট ৪৭ বার ওই আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করা হয়েছে কি না? অন্য দিকে, মহুয়ার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, কৃষ্ণনগরের সাংসদ এথিক্স কমিটিকে জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের তিক্ততা’ থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইকে একহাত নিয়েছেন মহুয়া। সূত্রের খবর, সেই সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয় মহুয়াকে। তবে বিজেপি সাংসদ ভিডি শর্মা মহুয়াকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিবর্তে অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে বলেছেন। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে সংসদের লগ ইন আইডি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ‘ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন’ করার কথা স্বীকার করেননি মহুয়া।
‘ঘুষের বিনিময় প্রশ্ন’ বিতর্কে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ এথিক্স কমিটির সামনে হাজিরা দেন মহুয়া। কমিটি সূত্রের খবর, প্রথমে সংসদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কয়েক জনের বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়। তার পর মহুয়ার বয়ান নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ-পর্বের প্রায় আড়াই ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর একটি বিরতি হয়। তার পর আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় বলে জানা যায়। তখনই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন মহুয়া-সহ বিরোধী সাংসদেরা।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যবসায়ী হীরানন্দানির থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন তিনি। সেই প্রশ্নের নিশানায় ছিলেন শিল্পপতি গৌতম আদানি। অনেক সময়ই নিশানা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। গত ২৬ অক্টোবর এই কাণ্ডে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব দেহাদ্রাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এথিক্স কমিটি। এর আগে মহুয়া লোকসভার এথিক্স কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানান, কমিটি গত দু’বছর ধরে কোনও বৈঠক ডাকেনি। পাশাপাশি, কমিটিকে তার লক্ষ্মণরেখাও মনে করিয়ে দেন তৃণমূল সাংসদ। কমিটি সূত্রে জানা যায়, তিনি লেখেন, এথিক্স কমিটি কোনও ফৌজদারি বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না। তার জন্য পৃথক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রয়েছে। মহুয়ার আরও অভিযোগ, সংসদে কেন্দ্রীয় শাসকদলের যে গরিষ্ঠতা রয়েছে, ক্রমাগত তার অপব্যবহার হচ্ছে। কমিটির ক্ষেত্রেও সেই অভিযোগ তোলেন তৃণমূল সাংসদ।