শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) অজিত পওয়ার, দেবেন্দ্র ফডণবীস, মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণন এবং একনাথ শিন্ডে। ছবি: পিটিআই।
মন্ত্রিত্ব দীর্ঘজীবী করাতে চাইলে কাজ করতে হবে। আর সেই কাজের মূল্যায়ন করার পর যদি গলদ ধরা পড়ে, তবে আর মন্ত্রী থাকা যাবে না। রবিবার মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পর এই নিয়মের কথা জানিয়ে দিল শাসক জোট ‘মহাজুটি’র তিন শরিক দল বিজেপি, শিবসেনা (শিন্ডে) এবং এনসিপি (অজিত)।
রবিবার মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা শিন্ডেসেনার প্রধান একনাথ শিন্ডে বলেন, “আমরা তিন দল প্রত্যেক মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি যে, তাঁদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে যেমন পুরস্কৃত করা হবে, তেমনই ব্যর্থ হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।” মহারাষ্ট্রের আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি (অজিত) প্রধান অজিত পওয়ার বলেন, “মন্ত্রীদের আড়াই বছরের মেয়াদ থাকবে। আমরা বাকি আড়াই বছরের জন্য অন্যদের একটা সুযোগ দেব।” তবে পরীক্ষায় ‘সফল’ মন্ত্রীদেরও মন্ত্রিত্বের মেয়াদ আড়াই বছর হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
অন্য দিকে, মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ শাসকজোটের বেশ কয়েক জন বিধায়ক। ক্ষোভের সুর জোরালো মূলত শিন্ডেসেনার অন্দরেই। মন্ত্রিত্ব না-পেয়ে দলের পদ ছেড়েছেন শিন্ডেসেনার বিধায়ক নরেন্দ্র ভন্ডেরকর। তিনি শিন্ডেসেনার ডেপুটি লিডার এবং বিদর্ভে দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তবে দলীয় পদ ছাড়লেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি তিনি। ‘মহাজুটি’র শরিক দল হলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অঠাওয়ালের দল রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এ)-কে কোনও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। সেই নিয়ে রবিবারই ক্ষোভ উগরে দেন রামদাস। তাঁর দাবি, অন্তত একটি দফতর দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে ‘মহাজুটি’র দাপুটে জয়ের পর গত ৫ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন বিজেপির ফডণবীস। উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শিন্ডে এবং অজিত। সেই শপথগ্রহণের ১০ দিন পরে রবিবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শাসকজোটের মোট ৩৯ জন বিধায়ক। এই ৩৯ জনের মধ্যে ১৯ জনই বিজেপি বিধায়ক। ফডণবীস মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়েছে শিবসেনা (শিন্ডে)-র ১১ জন এবং এনসিপি (অজিত)-র ন’জন বিধায়কের।
তবে গত মন্ত্রিসভায় থাকা শিবসেনার দীপক কেসরকার, তানাজি সবন্ত এবং আবদুল সাত্তারের ঠাঁই হয়নি ফডণবীসের মন্ত্রিসভায়। ঘটনাচক্রে, রবিবার মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি দীপককে। এনসিপির ছগন ভুজবল, দিলীপ ওয়াসলে পাতিল এবং বিজেপির সুধীর মুঙ্গাতিওয়ারও রবিবার শপথ নেননি। মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিসভার সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা হতে পারে ৪৩। ফডণবীস, শিন্ডে এবং অজিতকে ধরলে রবিবার পর্যন্ত মোট ৪২ জন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের আর কোনও সুযোগ নেই।
তবে এখনও পর্যন্ত মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন হয়নি। আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যে সেই কাজ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস। ‘মহাজুটি’-র একটি সূত্রের দাবি, গত মন্ত্রিসভায় যে দফতর যে দলের হাতে ছিল, এ বারেও তাই থাকতে চলেছে। তবে শিন্ডেসেনা অতিরিক্ত একটি দফতর পেতে পারে বলে ওই সূত্রটির দাবি। সূত্রটির আরও দাবি, রাজস্ব, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, সেচের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিজেদের হাতে রাখতে পারে বিজেপি। এনসিপি পেতে পারে অর্থ, সমবায়, কৃষি, ক্রীড়ার মতো দফতর। গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র দফতর শরিক শিন্ডেসেনাকে বিজেপি ছাড়ে কি না, তা-ই এখন দেখার।