বিধানসভা ভোটে ইভিএম-এ প্রার্থীর ছবি। —ফাইল চিত্র
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, সারা দেশে মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু শুধু নির্ঘণ্টই নয়, তার সঙ্গে এমন অনেক কিছুই ঘোষণা হয়েছে, যা এ বছর লোকসভা ভোটে প্রথম। ইভিএম-এ প্রার্থীর ছবি, প্রতিটা ইভিএম-এ ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপ্যাট)-এর মতো অনেক কিছুই প্রথম বার চালু হচ্ছে এই লোকসভা নির্বাচনে। একই সঙ্গে এবার ভোটার তালিকায় যোগ হয়েছে ৮ কোটি ৪৩ লক্ষ নতুন নাম। অর্থাৎ তাঁরাও প্রথম বার নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রার্থীর ছবি
এর আগে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটে এবং উপনির্বাচনে ইভিএম-এ প্রার্থীর নাম, দলীয় প্রতীক এবং ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু লোকসভা ভোটে হয়নি। সেই অর্থে এ বারই প্রথম লোকসভা ভোটে ইভিএম-এ প্রার্থীদের ছবি দেওয়া হচ্ছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে আরও স্বচ্ছতা আনতে এবং ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করতেই এ বার লোকসভা ভোটেও এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
ভিভিপ্যাট
গত কয়েকটি ভোটে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছিল। কিন্তু সব ইভিএম-এ ছিল না ভিভিপ্যাট। সার্বিক ভাবে লোকসভা ভোটে সব ইভিএম-এ ভিভিপ্যাট ব্যবহার হচ্ছে এই প্রথম। ভিভিপ্যাট কী? এটি ইভিএম-এর সঙ্গে যোগ করা আলাদা একটি যন্ত্র। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পর ওই যন্ত্র থেকে একটি স্লিপ বেরিয়ে আসবে। অর্থাৎভোটার যাঁকে ভোট দিলেন, সেটি ঠিকঠাক জায়গায় পড়েছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া যাবে ওই স্লিপ থেকে। তবে সেটি হাতে নেওয়া যাবে না। স্বচ্ছ একটি কাচের ভিতর দিয়ে ৬ সেকেন্ডের জন্য সেটি দেখা যাবে। তার পর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাতেই সেটি পড়ে যাবে নীচে রাখা নির্দিষ্ট বাক্সে। ভোটারের ক্ষেত্রে যেমন যাচাই করা সুবিধা হবে, তেমনই গণনার সময়ও ইভিএমের ফলাফল এবং ভিভিপ্যাটের স্লিপ মিলিয়ে দেখা হবে। অর্থাৎকোন দল কত ভোট পেল, সেটা ইভিএম এ দেখাবে। তার পর ভিভিপ্যাটের স্লিপেও সেই সংখ্যা মিলছে কি না, তা দ্বিতীয়বার নিশ্চিত করা যাবে এই পদ্ধতিতে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জিপিএস
ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিযোগ তুলেছেন। ইভিএম-এ কারচুপি করা সম্ভব— এমন দাবি অনেক দলের তরফেই করা হয়। অনেকে আবার ফের ব্যালট পদ্ধতিই ফিরিয়ে আনার দাবিতেও সরব। এই সব অভিযোগ উড়িয়ে ভোট প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে এ বার লোকসভা ভোটে প্রথম বারের জন্য ‘জিপিএস’ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন। কী ভাবে সেটি ব্যবহার হবে? নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যেখানেই ইভিএম নিয়ে যাওয়া হোক, তা মনিটর করা হবে জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎযে গাড়িতে ইভিএম স্থানান্তর করা হবে, তাতে জিপিএস বসানো থাকবে। ইভিএম কোথায় যাচ্ছে, কতক্ষণ সেখানে রয়েছে— ইত্যাদি সব কিছুই কমিশনের কর্মী-অফিসাররা মোবাইলের মাধ্যমে মনিটর করতে পারবেন ওই প্রযুক্তির সাহায্যে।
লোকসভা ভোটের ইতিহাস, আপনি কতটা ওয়াকিবহাল?
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় নির্বাচন, দেখে নিন কবে-কোথায় ভোট
বিদেশের সম্পত্তি
যে কোনও ভোটেই প্রার্থী হতে গেলে তাঁর এবং স্ত্রী বা স্বামীর সম্পদের পরিমাণ জানাতে হয় কমিশনকে। তবে সেটা এত দিন ছিল শুধু দেশের সম্পদ। এ বার তার সঙ্গে বিদেশের সম্পদের পরিমাণও জানাতে হবে কমিশনকে। পাশাপাশি শুধু স্বামী বা স্ত্রী নয়, প্রার্থীর ছেলেমেয়ের সম্পদের নথিও জমা দিতে হবে কমিশনে।
ভোটার স্লিপ যথেষ্ট নয়
ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কমিশনের কর্মীরা সচিত্র ভোটার স্লিপ দিয়ে আসেন। কিন্তু শুধু সেই স্লিপই যথেষ্ট ছিল না। তার সঙ্গে একটি সচিত্র পরিচয়পত্র লাগত। এবারও সেটা লাগবে। তবে সেই নথিগুলির মধ্যে কিছু পরিবর্তন করে মোট ১১টি নথিকে মান্যতা দেবে কমিশন। পরিচয় যাচাই করতে ভোটার কার্ড বা এপিক, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সরকারি চাকরির পরিচয়পত্র, ছবি-সহ ব্যাঙ্কের পাসবই, প্যান কার্ড, ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল-এর ইস্যু করা স্মার্ট কার্ড, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড, স্বাস্থ্য বিমার স্মার্ট কার্ড, পেনশনের নথি, আধার কার্ডের মতো নথি মিলিয়ে দেখবেন ভোটকর্মীরা।
আরও পডু়ন: পশ্চিমবঙ্গে কত আসন পাবে বিজেপি? কী বলছে সমীক্ষা...
এ ছাড়াও ভোটে প্রার্থীদের খরচে নজরদারি রাখতেও বেশ কিছু নয়া ব্যবস্থা এ বার চালু করছে কমিশন। তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আদর্শ আচরণবিধি লাগু হয়ে গিয়েছে। ভোটগণনা পর্যন্ত মোটা টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটলে ওই কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। প্রচার ও অন্যান্য খরচের হিসেব করতে শুধুমাত্র প্রার্থীর খরচই গণ্য হবে, দলের খরচ হিসেবে দেখানো যাবে না।
এবার এক জন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারবেন। তবে অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া এবং সিকিমের ক্ষেত্রে এই খরচের ঊর্ধ্বসীমা ৫৪ লক্ষ টাকা।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)