Pulwama Terror Attack

বিস্ফোরণের ক্ষত দগদগে পুলওয়ামায়

গত বছরের সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিরাপত্তা বাহিনী দিনে রাতে যখন খুশি মহল্লায় ঢুকে ঘোরাঘুরি করে, তল্লাশিও। মহল্লাবাসীর জীবনটাই বদলে গিয়েছে। 

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

পুলওয়ামা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১০
Share:

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল সিআরপি-র গাড়ি-বহর।—ফাইল চিত্র।

রাস্তার উপরে জায়গাটা এখনও চুনের দাগ দিয়ে ঘিরে রাখা। তার মধ্যে কয়েকটি পাথর সাজিয়ে একটা স্মারক তৈরির চেষ্টা। এক বছর আগে পুলওয়ামায় পাকা সড়কের উপরে ঠিক এই জায়গাটিতেই জঙ্গি আদিল দার বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারে সিআরপি-র গাড়ি-বহরে। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ৪০ জওয়ানের দেহ।

Advertisement

বিস্ফোরণ স্থলের অদূরে মুদির দোকান চালান উসমানের। মনে আছে সে দিনের ঘটনা? প্রশ্নের জবাবে চোখ বুজে ফেলেন প্রৌঢ়। বলেন, ‘‘মরার আগে পর্যন্ত মনে থাকবে। সে এক নারকীয় ঘটনা!’’ উসমান জানান, বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ এখনও তাঁর কানে ভাসে। রাতে চমকে উঠে ঘুম ভেঙে যায়। বহু বার ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন, ওষুধ খেয়েছেন, তবু সমস্যা মেটেনি। উসমান বলেন, ‘‘আর পাঁচটা দিনের মতো একটা শান্ত সকাল ছিল সেটা। কিন্তু এক লহমায় ভেঙে খান খান হয়ে গেল সেই শান্তি। ভয়ঙ্কর শব্দ, আর সঙ্গে সঙ্গে জওয়ানদের দেহ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। আমার এই দোকানের সামনেও এসে পড়েছিল বেশ কিছু টুকরো।’’

বিস্ফোরণস্থল থেকে একশো গজের মধ্যে বাড়ি মুজিবা আখতার (৬০)-এর। তাঁর কথায়, ‘‘একটা বিস্ফোরণ আমার গোটা জীবনটা বদলে দিয়েছে। এমন একটা ঘটনায় শুধু পুলওয়ামা নয়, গোটা উপত্যকার কেউ খুশি হতে পারেন বলে আমি মনে করি না।’’ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বাড়ির বাইরে আসা মাত্র ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে থমকে যান মুজিবা। বলেন, ‘‘সারাটা দিন আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, ধ্বংসের দিন এসে গিয়েছে।’’

Advertisement

মুজিবা যে মহল্লায় থাকেন, তার নাম চিঙ্কারাল। বহু বাড়ির দেওয়ালে এখনও ফাটলের দাগ। করিম রাঠের ঘুরিয়ে দেখালেন এমন কয়েকটি বাড়ি। বললেন, ‘‘অন্তত ২০০টি বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মাথা গুঁজে থাকতে হচ্ছে এত লোককে।’’ রাঠের জানালেন, গত বছরের সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিরাপত্তা বাহিনী দিনে রাতে যখন খুশি মহল্লায় ঢুকে ঘোরাঘুরি করে, তল্লাশিও। মহল্লাবাসীর জীবনটাই বদলে গিয়েছে।

ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষক ফিরোজ আহমেদের কথায়, ‘‘পুলওয়ামার হামলা তো গোটা ভারতের চিত্র বদলে দিয়েছে। এই হামলা আর বালাকোটের বিমান হানা, দুইয়ে মিলেই তো ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছে আগের শাসক দলকে! আর কাশ্মীরের পরিস্থিতি সেই যে খারাপ হল, দিনের পর দিন তা আরও খারাপই হয়ে চলেছে।’’

শুক্রবার পুলওয়ামা হামলার প্রথম বার্ষিকী পালন করবে উপত্যকার সব নিরাপত্তা বাহিনী। নিহত জওয়ানদের স্মরণে হবে বিশেষ প্যারেড।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement