দুষ্কৃতীদের গুলিতে এই জায়গাতেই মৃত্যু হয় ৮ পুলিশকর্মীর। —ফাইল চিত্র।
ভিতরের কারও সাহায্য না থাকলে বছরের পর বছর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াতে পারে কেউ? গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের পিছনে দীর্ঘদিন হন্যে হয়ে ঘোরার পর এমনই প্রশ্ন মাথায় এসেছিল তাঁর। তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু চিঠির জবাব হাতে আসার আগেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হল তাঁকে।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের কানপুরে কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করতে গিয়ে তার শাগরেদদের হাতে মৃত্যু হয় ডেপুটি সুপার দেবেন্দ্রকুমার মিশ্রর। তার পর চার দিন কেটে গেলেও এখনও বিকাশ দুবের নাগাল পায়নি যোগীর রাজ্যের পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে দেবেন্দ্রকুমারের লেখা বলে একটি চিঠি সামনে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে সেটি।
গত মার্চ মাসে কানপুরের তৎকালীন পুলিশ প্রধান অনন্তদেও তিওয়ারিকে দেবেন্দ্রকুমার ওই চিঠি লেখেন বলে জানা গিয়েছে। তাতে বলা হয়, চৌবেপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিনয় তিওয়ারি-সহ পুলিশের মধ্যে থেকে কিছু লোক জন বিকাশ দুবেকে সাহায্য করছেন। তাঁকে আইনের নজর থেকে আড়াল করছেন। চিঠিতে বিনয় তিওয়ারির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আর্জিও জানান দেবেন্দ্রকুমার।
তিন মাস আগে দেবেন্দ্রকুমার মিশ্র এই চিঠি লেখেন বলে দাবি উঠছে।
আরও পড়ুন: সংঘাতের জের, চিনের সঙ্গে ৯০০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করল হিরো সাইকেল
বিকাশ দুবের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ১০ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তার মধ্যে রয়েছেন বিনয় তিওয়ারিও। কিন্তু দেবেন্দ্রকুমারের লেখা বলে যে চিঠি সামনে এসেছে, সেটির সত্যতা এখনও পর্যন্ত যাচাই করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত সেইরকম কোনও চিঠি তাঁদের হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন কানপুরের পুলিশ প্রধান দীনেশকুমার পি।
সংবাদমাধ্যমে দীনেশকুমার বলেন, ‘‘ওইরকম একটা চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে বলে জানতে পেরেছি। তবে ডিএসপি এবং কানপুরের এসএসপি-র দফতরে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও চিঠির কোনও হদিশ মেলেনি। পাওয়া যায়নি কোনও ফাইলও। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। কিছু পেলে অবশ্যই জানাব।’’
উত্তরপ্রদেশের চৌবেপুর থানার বিকরু গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ দুবের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, তোলাবাজির মতো অন্তত ৬০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি গ্রামেরই এক বাসিন্দা তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে বৃহস্পতিবার রাতে ওই গ্রামে অভিযানে যায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: চিনা পণ্যের নিষেধে ক্ষতি হবে ঠিকই, কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই আমাদের
কিন্তু আগে থেকেই বিকাশ ও তার দলবলের কাছে পুলিশ আসার খবর পৌঁছে যায়। সেই মতো গ্রামে ঢোকার মুখেই পুলিশকে বাধা দেয় তারা। তার ফলে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটেই গ্রামে ঢোকে পুলিশ। কিন্তু দুবের আস্তানার কাছে পৌঁছতেই ছাদ থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু করে দুবের লোকজন।
তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দেবেন্দ্রকুমার মিশ্র-সহ আট পুলিশকর্মীর। এই ঘটনায় বিকাশ দুবের আত্মীয় প্রেমপ্রকাশ পান্ডে ও তার সহকারী অতুল দুবেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকাশ দুবের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগে প্রায় ২০০ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁদের মোবাইলের কল রেকর্ডস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।