প্রতীকী ছবি।
মায়ের চোখের সামনে বাচ্চার ঝাঁপিয়ে পড়ে, মুখে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে চিতাবাঘ। ভয়ে চিৎকার করছেন মা। তাড়া করছে আশপাশের মানুষ। খানিক দূর পাহাড়ে উঠে, জঙ্গলে বাচ্চটিকে ফেলেই পালাল চিতাবাঘটি। কিন্তু তত ক্ষণে মারা গিয়েছে ৬ বছরের শিবম কুমার। গুয়াহাটির মালিগাঁও এলাকার ঘটনা। গুয়াহাটির পাহাড়গুলিতে চিতাবাঘের বসত। তারা প্রায়ই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। কিন্তু এই ভাবে বাড়ির সামনে থেকে বাচ্চা শিকার করার ঘটনা আগে ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদিমগিরি এলাকায় পাহাড়ের গায়ে বাড়ি শিবমদের। শুক্রবার রাতে বাড়ির সামনেই সে খেলছিল। অল্প দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মা। তখনই শিবমের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড় কামড়ে ধরে পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। পরে জঙ্গল থেকে শিবমের দেহ মেলে। হাসপাতালে নিয়েও লাভ হয়নি। চিতাবাঘটির সন্ধানে শনিবার সকালে খাঁচায় ছাগল রেখে টোপ দেওয়া হয়। এখনও সেটির হদিশ মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই পাহাড়ে অন্তত ৬টি চিতাবাঘ রয়েছে। তারা মাঝেমধ্যেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে ছাগল, মুরগি নিয়ে যায়। কিন্তু এ ভাবে বাচ্চা খেয়ে ফেলার চেষ্টা আগে করেনি। তাঁদের দাবি, বন দফতরকে বারবার বলেও লাভ হয় না। বন দফতরের পাল্টা দাবি, পাহাড়গুলি চিতাবাঘেদেরই বসতি ছিল। সংরক্ষিত অরণ্য ঘেঁষা পাহাড়ে বাড়ি বানিয়ে জবরদখল করেছে মানুষ। নেই চিতাবাঘের খাবার। তাই মানুষের এলাকায় হানা দিচ্ছে।
গুয়াহাটিতে মালিগাঁও, কালাপাহাড়, নরকাসুর, জালুকবাড়ি, খানাপাড়া, পাঞ্জাবাড়ি, জাপরিগগ, খারঘুলি এলাকার পাহাড়গুলিতে চিতাবাঘ মেলে। কামাখ্যা মন্দিরের ভিতরে ও তার আশপাশের চত্বরেও রাতে চিতাবাঘেরা খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাদের ধরে ধরে চিড়িয়াখানায় ঢোকানো হয়েছে। মুবিনা আখতার, অমিত শর্মাদের মতো বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ রক্ষাকর্মীদের বক্তব্য, জঙ্গল সাফ হওয়ায় কমেছে তাদের খাদ্যও। গুয়াহাটির পাহাড়-জঙ্গল থেকে হরিণও অনেক কমে গিয়েছে। অনিয়্ন্ত্রিত নগরোন্নয়নের জেরে বন ধ্বংস হচ্ছে, গুয়াহাটির চারপাশে ধস নামছে, বন্যা হচ্ছে।