প্রতীকী ছবি।
রুপোলি জগৎ থেকে এসে রাজনীতির ময়দানে ইনিংস শুরু করার নজির অজস্র। দক্ষিণ ভারতকে এই ধারা প্রবর্তনের জন্মভূমিই বলা যায়। সেই দক্ষিণেই এ বার উলট পুরাণ! রুপোলি পর্দায় চমক দিতে চলেছেন রাজনীতিকেরা। এবং সেই চিত্রনাট্যে বাম ও ডানের এক ঠাঁই!
মালয়ালম ‘তী’ (যার অর্থ আগুন) ছবিতে একসঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে কেরলের দু’জন বিধায়ক, রাজ্যসভার এক সাংসদ এবং এক জন প্রাক্তন সাংসদকে। যাঁরা ক্যামেরার সামনে চরিত্রে রূপ দিচ্ছেন, তাঁরা কেউই পেশাদার অভিনয় জগৎ ছেড়ে আসেননি। শখের নাটক বা তথ্যচিত্র জাতীয় কিছু ছোট ছবিতে আগে হাত পাকিয়েছেন অবশ্য। সেই রাজনীতিকদেরই এক সঙ্গে তাঁর ছবিতে নিয়ে এসেছেন পরিচালক অনিল নগেন্দ্রন। কয়েক বছর আগে যিনি রাজনৈতিক কাহিনি নিয়েই ছবি তৈরি করেছেন।
অনিলের এ বারের ছবিতে মূল চরিত্র এক তরুণ সাংবাদিকের। যিনি তাঁর বাবার খুনের বদলা নিতে চাইছেন। ছবির এই মুখ্য চরিত্রে দেখা যাবে সিপিআই বিধায়ক মহম্মদ মহসিনকে। প্রতিবাদী হিসেবে তাঁর বন্ধুর ভূমিকায় ছবিতে যিনি থাকছেন, সেই সি আর মহেশও বিধায়ক। তবে কংগ্রেসের। একটি জেলের প্রধান কর্তার ভূমিকায় আছেন সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ কে সোমপ্রসাদ। প্রাক্তন সাংসদ সুরেশ কুরুপও থাকছেন একটি চরিত্রে।
সিপিআইয়ের মহসিন ছিলেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। মহসিনের বক্তৃতা শুনে তাঁকে ছবিতে নেওয়ার কথা মনে হয়েছে পরিচালক অনিলের। মহসিনের বক্তব্য, ‘‘কেরলে এবং দিল্লিতে পড়াশোনার সময়ে নাটকের শখ ছিল। কিছু ছোট ছবিতেও কাজ করেছি। তবে মূল ধারার ছবিতে কাজের সুযোগ হয়নি আগে। এই প্রস্তাবটা পেয়ে ভাল হল, একই সঙ্গে অভিনয়টাও ভাল করার সুযোগ হয়ে গেল!’’ এঁদের মধ্যে সোমপ্রসাদ তুলনায় বয়সে বড়। রাজ্যসভার সাংসদের মন্তব্য, ‘‘অনিল আমার কলেজের বন্ধু। ছবি করার সময়ে ও নিজেই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। স্বীকার করে নিয়েছি। অনিলের আগের ছবিতেও একটা ছোট চরিত্রে কাজ করেছিলাম।’’ আর কংগ্রেসের মহেশ বলছেন, ‘‘এটা একটা অ্যাকশন থ্রিলার। অন্যায়ের বিরুদ্ধেই রাজনীতিতে আমরা লড়াই করি। সিনেমাতেও সেটাই করছি!’’ মহেশের পরিবার অবশ্য শিল্প জগতের সঙ্গেই যুক্ত।
ছবির শুটিং হয়েছে কেরলেরই আলপ্পুঝা, মলপ্পুরম, কোল্লম ও তিরুঅনন্তপুরমে। পরিচালক অনিলের ব্যাখ্যা, রাজনীতিকদের নিয়েই ছবি তৈরি করবেন— এমন কিছু ঠিক করে নিয়ে তিনি কাজে নামেননি। যাঁদের অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কারণ আছে। বাংলায় কয়েক দশক আগে রাজনীতিক সুব্রত মুখোপাধ্যায় তৎকালীন অভিনেত্রী মুনমুন সেনের সঙ্গে টেলি সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন। বিস্তর চর্চা হয়েছিল তা-ই নিয়ে। কেরলে এক ঝাঁক রাজনীতিকের মুখ রুপোলি পর্দায় দেখা যাবে জেনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের কটাক্ষ, ‘‘বাম এবং কংগ্রেস মানুষের সঙ্গে অভিনয়ই করে! মুখে যা বলে, কাজে তা করে না। এখন সরাসরিই অভিনয়ের জগতে চলে যাচ্ছে!’’