কাজের নিশ্চয়তা কত বা বাড়তি মজুরি আদৌ মিলবে কি শ্রমিকদের?
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু শহর থেকে গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। মোদী সরকার গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান চালু করার পরেও বিপুল কাজের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সমাজকর্মীদের অভিযোগ, ফলে বাধ্য হয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ফের শহরে ফিরছেন শ্রমিকরা।
একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা এনরেগা-র পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে গবেষক-সমাজকর্মীরা বলছেন, এপ্রিল থেকে জুলাই— এই চার মাসে এনরেগা-র কাজের চাহিদার ১৭ শতাংশই মেটানো যায়নি। এ দিকে অর্থ বছরের প্রথম চার মাসেই এনরেগা-তে বরাদ্দের শতকরা ৪৮ ভাগ অর্থ খরচ হয়ে গিয়েছে।
গ্রামে ফেরা শ্রমিকদের এনরেগা-তে কাজ দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না দেখে মোদী সরকার দেশের ১১৬টি জেলায় ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ চালু করেছিল। ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়। ৬টি রাজ্যের ১১৬টি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়, কারণ এই সব জেলার প্রতিটিতে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক ফিরে গিয়েছেন। তার পরে কী অবস্থা? শিক্ষাবিদ-সমাজকর্মীদের সংগঠন ‘পিপল’স অ্যাকশন ফর এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি’-র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই সব জেলাতেও এনরেগা-তে ১২ শতাংশ কাজের চাহিদা মেটানো যায়নি। গত কয়েক দিনে দেখা যাচ্ছে, দিল্লির মতো যে সব শহরে লকডাউন নেই, সেখানে শ্রমিকরা ফিরে আসছেন। এনরেগা সংঘর্ষ মোর্চা-র সমাজকর্মীদের বক্তব্য, “যদি শ্রমিকরা এনরেগা-তে ঠিকমতো মজুরিতে কাজ পেতেন, তা হলে তাঁরা অতিমারির মধ্যে শহরে ফিরতেন না।”
পরিসংখ্যান বলছে, ৪.১৭ লক্ষ পরিবার ইতিমধ্যেই ১০০ দিনের কাজ করে ফেলেছেন। তা হলে বছরের বাকি সময়ে তাঁদের পেট চলবে কী করে? এনরেগা চালুর পক্ষে আন্দোলনকারী সমাজকর্মী নিখিল দে-র মতে, এ বছর ২০০ দিনের কাজ দেওয়া দরকার। একই মত জেএনইউ-এর অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষের। তাঁর বক্তব্য, তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর সঙ্কট আসতে চলেছে।
প্রশ্ন হল, বড় শহরে যে ভাবে বার বার লকডাউন করতে হচ্ছে, সেখানে শহরে ফিরেও রুটিরুজি জুটবে কি? আজ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে ‘জনতা পার্লামেন্ট’-এ অর্থনীতিবিদ-সমাজকর্মী জঁ দ্রেজ বলেন, “সকলের জন্য রেশন ব্যবস্থা ছাড়া সুরাহার উপায় নেই।” সমাজকর্মী হর্ষ মন্দারেরও মত, “রেশনে ডাল ও তেল দেওয়া হোক। শহরেও এনরেগা চালু হোক।”