কাজের মূল্যায়ন এবং রাজনীতির সমীকরণ— এই দুইয়ের মিশেলেই এ বারে মোদীর মন্ত্রিসভা গড়ে উঠেছে, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাতে নতুন মুখ যেমন রয়েছে, তেমনই মন্ত্রীদের দায়িত্বেও বড় রদবদল করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বারের মন্ত্রিসভায় এ রকমই এক নতুন মুখ হলেন অশ্বিনী বৈষ্ণো। তাঁর উপর অগাধ ভরসা রেখে প্রথমবারেই রেলমন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ভার তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রেলের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরও মন্ত্রী তিনিই। কে এই অশ্বিনী বৈষ্ণো?
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। বিদেশি এমবিএ ডিগ্রিও রয়েছে তাঁর। একসময় কর্পোরেট জগতেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। টানা ১৫ বছর তিনি আইএএস হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন। তার পর সব কিছু ছেড়ে হয়েছিলেন উদ্যোগপতি।
সেখান থেকেই মূলত সরাসরি রাজনীতির যাত্রা শুরু তাঁর। তবে কর্মজীবনে বরাবরই বিজেপি-র সুনজরে ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে জোধপুরের বৈরাগী পরিবারে জন্ম অশ্বিনীর। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি।
১৯৯১ সালে জোধপুরের এমবিএম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে স্নাতক হন। ইলেক্ট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে সোনার পদকও পান।
এর পর আইআইটি কানপুর থেকে এমটেক পাশ করেন। ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষার। কিন্তু তার আগেই তিনি আইএএস-এর পরীক্ষায় সফল হন।
১৯৯৪ সালে সারা ভারতে ২৭ র্যাঙ্ক করেন তিনি। তবে আইএএস হয়েও পড়াশোনায় ইতি টানেননি তিনি। আইএএস থাকাকালীনই আবার আমেরিকার হোয়ারটন স্কুল থেকে এমবিএ করেন।
২০০৩ সাল পর্যন্ত ওড়িশায় ছিলেন তিনি। আইএএস হিসাবে বালেশ্বর এবং কটকের দায়িত্ব সামলেছেন। এর পর তাঁকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ডেপুটি সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ২০০৪ সালে বাজপেয়ীর ব্যক্তিগত সচিবও করা হয় তাঁকে।
২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গোয়ার মার্মাগাও বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন। এর পর তিনি কাজে বিরতি নেন এবং সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে এমবিএ করতে আমেরিকা পাড়ি দেন।
দেশে ফিরে প্রথমে জিই ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং পরে সিমেনস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলান। ৪-৫ বছর এ ভাবে কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করেছেন। তার পর কর্পোরেট সেক্টর থেকেও বিদায় নেন। ২০১২ সালে কর্পোরেট সেক্টরকে বিদায় জানিয়ে নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন।
প্রথম থেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও বিজেপি ঘেঁষা মনোভাব তাঁর বরাবরই। আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে উদ্যোগপতি হিসাবে কাজ করার সময়ই তাঁর সরাসরি রাজনীতিতে আসা।
তিনি ওড়িশার রাজ্যসভার সাংসদ। বিজু জনতা দলের সমর্থনে ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন তিনি।
এ বার আরও এক ধাপ উঠে ঠাঁই করে নিয়েছেন মোদীর মন্ত্রিসভাতেও। আর প্রথমবার মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলানোর দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিলেন। রেল এবং তথ্যপ্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলাবেন তিনি।