মায়ানমার সীমান্তে আত্মসমর্পণকারী কেএলও প্রধান জীবন সিংহ এবং তাঁর সহযোগীরা। ছবি: সংগৃহীত।
জল্পনা শুরু হয়েছিল কয়েক দিন আগেই। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গেল, উত্তরবঙ্গে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর প্রধান জীবন সিংহ ছ’জন অনুগামীকে নিয়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলার মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নয়াবস্তি এলাকায় আত্মসমর্পণ করেছেন।
আপাতত, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, জীবন ও তাঁর অনুগামীদের আত্মসমর্পণে বড় ভূমিকা রয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার। আত্মসমর্পণকারী কেএলও নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে শীঘ্রই অসমে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের একটি সূত্রের দাবি, জীবনরা গত কয়েক দিন নাগাল্যান্ডের মন জেলার অন্য পারে মায়ানমারের শিবির গোটাচ্ছিলেন। তাঁরা ভারতে ফিরতে তৈরি— এই বার্তা পাঠানোর পরে, অসম রাইফেলসের দল মন জেলায় যায়। ভারত-মায়ানমারের সীমান্ত সমঝোতা অনুযায়ী, দুই দেশের মানুষই সীমান্তের দুই পারে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রের দাবি, ওই এলাকায় জীবনকে আত্মসমর্পণ করানো হয়।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত গত এক বছর ধরেই শান্তি ফেরাতে কেএলও নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। আক্রাসু-র প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে রাজবংশী জাতীয় পরিষদের নেতা বিশ্বজিৎ রায় মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। বাংলাকে এড়িয়ে হিমন্তের এই পদক্ষেপ ঘিরে প্রশ্নও উঠেছিল। পৃথক কামতাপুর গড়ার দাবিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ১৯৯৫ সালে তৈরি কেএলওর বিরুদ্ধে।
২০০৩ সালে আলিপুরদুয়ার লাগোয়া ভুটানের জঙ্গলে ঘাঁটি গড়ে বসা কেএলও এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার’ এবং ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট’ চালিয়েছিল ভারও ও ভুটান সেনা। জীবনের বোন সুমিত্রা, ভগ্নীপতি ধনঞ্জয় বর্মণ, সহ-সভাপতি হর্ষবর্ধন, সেনাধ্যক্ষ টম অধিকারী, কৈলাশ কোচের মতো কেএলও-র শীর্ষ নেতারা আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু জীবন মায়ানমারে পালিয়ে গিয়ে নাগা জঙ্গিগোষ্ঠী এনএসসিএন(খাপলাং)-এর শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।সম্প্রতি জীবন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেছিলেন, ১৯৪৯ সালের একত্রীকরণ চুক্তির ভিত্তিতে পৃথক কামতাপুর রাজ্য দিতে শান্তি আলোচনায় রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।