—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কেরলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নিপা। আক্রান্তদের প্রায় সকলেই সে রাজ্যের কোঝিকোড় জেলার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে কেরল সরকারের তরফে। সংক্রমণ রুখতে ওই জেলার সাতটি গ্রামকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা (কনটেনমেন্ট জ়োন) বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু স্কুল।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ জানিয়েছেন, নিপা ভাইরাসের সংক্রমণের হার কম হলেও মৃত্যুহার তুলনায় অনেক বেশি। বুধবার বিধানসভায় সিপিআই বিধায়ক পি বালাচন্দ্রনের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, নিপা ভাইরাসের ‘বাংলাদেশ’ নামক যে রূপ কেরলে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে, তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে।
নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ এবং তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে একটি ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগার তৈরি করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)। বুধবার সকালেই এনআইভি-র একটি দল পুণে থেকে কোঝিকোড়ে পৌঁছয়। মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের একটি দল চেন্নাই থেকে বুধবারই কেরলে এসেছেন। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চও নিপা আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছে বলে বিধানসভায় জানিয়েছেন সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কেরলের কোঝিকোড় জেলায় অন্তত চার জন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ৩০ অগস্টের পর সোমবার কেরলের কোঝিকোড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে দু’জনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, মৃতেরা নিপা ভাইরাসের কবলে পড়েছিলেন। সোমবার কোঝিকোড় জেলা জুড়ে নিপা ভাইরাস বিষয়ে সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই কোঝিকোড়ে একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে কেরল সরকার।
গোটা পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। মৃত দু’জনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সতর্ক থাকাটা জরুরি। এই ভাইরাসের মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর যে রূপরেখা তৈরি করেছে, তা মেনে চলার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’
নিপা ভাইরাসে মড়কের সাক্ষী থেকেছে কোঝিকোড় এবং মলপ্পুরম জেলা। ২০১৮ সালে এই ভাইরাসের জেরে দুই জেলায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে ১৮ জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ২০২১ সালেও এই ভাইরাসে মড়ক দেখা দেয় দু’জেলায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, মানবদেহের পাশাপাশি পশুপাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে নিপা ভাইরাস। ফলাহারী বাদুড় বা ‘ফ্রুট ব্যাটস’-এর মাধ্যমে মূলত এর সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণত জ্বর, পেশির ব্যথা, মাথাধরা, ঝিমুনি এবং বমি বমি ভাবের উপসর্গ দেখা দেয়।