দুবাই বিমানবন্দরের শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে (ডান দিকে)-র সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিদেশ সফরে গিয়েও বিরোধী জোট নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুবাই থেকে বুধবার সকালে স্পেনের বিমান ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানবন্দরের লাউঞ্জে দেখা হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের সঙ্গে। হাতজোড় করে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তাঁরা। সংক্ষিপ্ত কথাবার্তার শেষে এমন এক প্রশ্নের মুখে পড়তে হল মমতাকে, যার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেত্রী।
বিক্রমসিঙ্ঘে আচমকাই মমতাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?’’ মমতা উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’’ এর পরেই বিক্রমসিঙ্ঘের প্রশ্ন, ‘‘আপনিই কি বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন?’’ প্রতিবেশী দেশের প্রেসিডেন্টের থেকে এমন প্রশ্ন যে আসতে পারে, ভাবনাতেই ছিল না মমতার। উত্তরে ‘ওহ্ মাই গড’ বলে হাসতে দেখা যায় তাঁকে। তার পরই একটু থেমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা মানুষের উপর নির্ভর করছে।” আরও এক বার ওই একই প্রশ্ন করেন বিক্রমসিঙ্ঘে। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, “বিরোধীরাও ক্ষমতায় আসতে পারে।”
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে বাংলায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে নিজের ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিক্রমসিঙ্ঘের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি জানান তিনি। লেখেন, বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে আসার জন্য শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। বিক্রমসিঙ্ঘেও তাঁকে শ্রীলঙ্কায় যেতে অনুরোধ করেছেন, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার কিছু ক্ষণ আগে দুবাই থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের পথে রওনা দেয় মমতার বিমান। বিকেলের পরে মাদ্রিদ পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে লা লিগার (স্পেনের ফুটবল লিগ) প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার তেভাজ়ের বৈঠক। সেখানে থাকার কথা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কলকাতা ফুটবলের তিন প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান কর্তাদের। বাংলায় আধুনিক ফুটবলের প্রসারের জন্য ওই বৈঠক। লা লিগার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন মমতা-তেভাজ়। শুক্রবার দুপুরে মাদ্রিদে বাণিজ্য শীর্ষবৈঠক। সেখানে বাংলার তরফে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী শিল্পপতিরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যমহলের শীর্ষবৈঠকের পাশাপাশি শিল্পপতিদের সঙ্গে আরও বিভিন্ন বৈঠক চলতে থাকবে।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টের কিছু ক্ষণ আগে (ভারতীয় সময়) দুবাই পৌঁছেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বাণিজ্যিক রাজধানীতেই ছিলেন। রাতে সেখানে সফরসঙ্গীদের সঙ্গে হালকা মেজাজে কথাবার্তার পাশাপাশি ছবিও আঁকেন তিনি। ছবির নাম দিয়েছেন ‘আর্থ লাফ্স ইন ফ্লাওয়ারস’।
এই ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মাদ্রিদ সফর শেষ করে রবিবার মমতা ট্রেনে যাবেন বার্সেলোনায়। সেখানে পৌঁছে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী যাবেন স্থানীয় বাঙালি এবং ভারতীয়দের সঙ্গে মিলিত হবেন। সোমবার দুপুরে বার্সেলোনায় আবার শিল্পবৈঠক। সেখানে স্পেনীয় শিল্পপতিদের সঙ্গেও বাংলার শিল্পপতিদের আলাদা বৈঠক হবে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে তিন ঘণ্টা বার্সেলোনায় শিল্পবৈঠকে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে যোগ দেবেন বাংলার শিল্পপতিরাও।
পরের বুধবার রাতে বার্সেলোনা থেকে দুবাইয়ের পথে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি পৌঁছবেন দুবাই। সে দিনই মুখ্যসচিবের যাওয়ার কথা দুবাই সমুদ্রবন্দরে। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুবাইয়ে বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যায় প্রবাসী বাঙালি এবং ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ। শনিবার দুপুরে দুবাই থেকে রওনা দিয়ে সে দিন সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার প্রশাসনিক মহল এবং বণিকমহল মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন এবং দুবাই সফর নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই আশাবাদী। তাঁদের মতে, এই সফরের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী বছরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। সেই কারণেই এই সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ।