ফাইল ছবি।
দেশের বিচারব্যবস্থার বর্তমান গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যসভা সাংসদ তথা প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল। রবিবার, ইংল্যান্ড থেকে ফোনে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উদ্বেগ প্রকাশ করে কপিল জানান, প্রতিষ্ঠানের (বিচার বিভাগ) কয়েক জন সদস্য তাঁকে হতাশ করেছে। সাম্প্রতিক অতীতে যা হয়েছে, তাতে লজ্জায় তাঁর মাথা হেঁট হয়ে যায়।
সাক্ষাৎকারে কপিল আরও জানান, সাম্প্রতিককালে অবাধ মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও বড়সড় বাধা তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, অবাধ মতপ্রকাশ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে তার ব্যাখ্যা করেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক, এবং সাংবিধানিক ভাবে যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত, তার-ও পরিপন্থী।
কেন্দ্রের মোদী সরকারের দিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে প্রবীণ আইনজীবীর দাবি, স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কণ্ঠরোধ করে দেশে অলিখিত জরুরি অবস্থা চলছে। দৈনিক ভিত্তিতে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ কপিলের। তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি আসলে কংগ্রেসমুক্ত ভারত নয়, বিরোধীমুক্ত ভারত তৈরি করতে মরিয়া।
অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেরের গ্রেফতারি নিয়েও তোপ দেগেছেন কপিল। এই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, ‘‘বিগত ৫০ বছর ধরে আমি যে প্রতিষ্ঠানের (বিচার বিভাগ) অংশ, সেখানকার কয়েক জন সদস্য আমাদের হতাশ করেছেন। যা হচ্ছে তাতে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়।’’ সাংবাদিকের গ্রেফতার ও আদালতে তাঁর জামিন খারিজ নিয়েও নিজের মত প্রকাশ করেছেন কপিল। তাঁর মতে, একটি চার বছরের পুরনো টুইট, যেখানে সামান্যতম সাম্প্রদায়িক উস্কানিও নেই, তার জন্য একজনকে গ্রেফতার এবং উপর্যুপরি জামিন বাতিল তাঁর কাছে অভাবনীয় একটি ঘটনা। এর সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘এহ বাহ্য, বেশি দিন যে তাঁকে গ্রেফতার করে রাখা যাবে না তা বুঝতে পেরে তদন্তকারী সংস্থা এখন অন্য নানা বিষয়ের দিকে নজর দিয়েছে। যে বিষয়ের সঙ্গে চলতি মামলার কোনও সম্পর্কই নেই। এখন আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা হল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার এবং তা প্রমাণ করতে গোলমেলে তদন্ত প্রক্রিয়া।’’
ইদানীং তদন্তকারী সংস্থাগুলো কী ভাবে কাজ করে, সাক্ষাৎকারে তা-ও বর্ণনা করেছেন কপিল। তিনি বলেন, ‘‘এখন যেটা চলছে তা হল, এক জনকে গ্রেফতার করুন। তার পর তদন্ত শুরু করুন যে তিনি কোথায় কী আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ জন্য তাঁর বিভিন্ন নথি চেয়ে আদালতে আবেদন। তার পর আদালতে এসে বলুন, ওই ব্যক্তির আরও বিভিন্ন অনিয়ম আছে বলে মনে হচ্ছে, তাই সেগুলো তদন্ত করার জন্য জামিন খারিজ করা হোক।’’
কপিলের মতে, যে ভাবে জুবের বা সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের মুখ পুড়েছে। বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। যা ভারতের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেও মনে করেন কংগ্রেসত্যাগী এই প্রবীণ নেতা।