পীযূষ জৈন। ফাইল চিত্র।
সাজপোশাক, আচার-আচরণে দেখে বোঝার উপায়ই ছিল না এই মানুষটি কয়েকশো কোটি টাকার মালিক! সুগন্ধি ব্যবসায়ী পীযূষ জৈনের ঘর থেকে যখন ১৯৭ কোটি টাকা নগদ, ২৩ কিলো সোনা উদ্ধার হয় আঁতকে উঠেছিলেন কনৌজের চিপাইতির বাসিন্দারা।
উত্তরপ্রদেশের সুগন্ধি নগরী বলতেই কনৌজের নাম উঠে আসে। প্রচলিত যে, কনৌজে নালা দিয়ে নাকি সুগন্ধি বয়ে যায়। যদি সুগন্ধির ঘ্রাণ নিতে হয়, তা হলে অবশ্যই চিপাইতিতে আসতে হবে। ছোট ছোট গলি, তস্য গলিতে সুগন্ধি তৈরি হয়। এই গ্রামেই নিজেদের ব্যবসা আড়ে-বহরে বাড়িয়ে তুলেছিল জৈন পরিবার।
পীযূষের বাবা মহেশচন্দ্র জৈন এক জন রসায়নবিদ ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই পীযূষ এবং তাঁর ভাই অম্বরীশ সুগন্ধি তৈরির পদ্ধতি রপ্ত করেছিলেন। হোমিওপ্যাথিরও বিদ্যা রয়েছে তাঁর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খুব কম দেখা যেত পীযূষকে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও খুব কম বলতেন তিনি। ফ্যাশনিস্তা নয়, একেবারে সাদামাটা ভাবেই সকলের চোখে ধরা দিতেন তিনি। চড়তেন পুরনো একটা লড়ঝড়ে স্কুটারে। সচরাচর কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে যেতেন না। তবে কোনও বিয়েবাড়িতে গেলে একটা চটি আর পাজামা আর ফতুয়াই ছিল তাঁর পোশাক।
পীযূষের চারটি বাড়ি। মূল বাড়িটি চিপাইতি গ্রামে। বাকি তিনটি কনৌজোর বিভিন্ন প্রান্তে। স্থানীয়দের দাবি, চিপাইতির বাড়িটা সব সময়েই একটা রহস্যে ঘেরা থাকে। ভিতরে কী চলছে, কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তা কাকপক্ষীতেও টের পায় না। ৭০০ বর্গগজের উপর বাড়িটির চারপাশে উঁচু মোটা দেওয়াল তোলা। বাড়িটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে আশপাশের বাড়ি থেকে চেষ্টা করেও ভিতরের কিছু দেখা না যায়। স্থানীয়দের দাবি, জয়পুর থেকে বিশেষ মিস্ত্রি নিয়ে এসে বাড়িটি তৈরি করানো হয়েছিল।
দূরে কোথাও গেলে পুরনো একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন পীযূষ। তাঁর দু’টি গাড়ি রয়েছে। একটি কোয়ালিস, অন্যটি মারুতি। কানপুরে তাঁর বাড়ির বাইরে সব সময় এই দু’টি গাড়ি পার্ক করা থাকত। চিপাইতি গ্রামের বাড়িতে কাজের সুবাদে আসতেন পীযূষ। কানপুরে প্রতিবেশীদের কাছে খুব নম্র এবং ভদ্র পরিবার হিসেবেই পরিচিত জৈন পরিবার। কিন্তু চিপাইতি গ্রামের মানুষ পীযূষকে খুব একটা ভাল চোখে দেখতেন না। সব সময় সন্দেহের চোখে দেখতেন পীযূষের চাপা স্বভাবের জন্য। স্থানীয়দের দাবি, মাত্র ১৫ বছরেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে গিয়েছিল জৈন পরিবারের। কানপুর থেকে সুগন্ধির ব্যবসাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশের অন্য প্রান্তেও।
কয়েক দিন আগে পীযূষের সম্পত্তির ‘হিমশৈল’টি সামনে আসে। যা দেখে চমকে যায় গোটা দেশে। পীযূষের এই সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। বিরোধীদের অভিযোগ, এগুলি সব বিজেপি-র টাকা। ভুল করে পীযূষের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন জিএসটি-র আধিকারিকরা। যদিও শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মল সীতারামন বিরোধীদের সেই অভিযোগের পাল্টা উত্তর দিয়েছেন।