ফাইল চিত্র
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার দাঙ্গার একাধিক তদন্তে ঢিলেমি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল দিল্লির একটি আদালত। বিচারকের বক্তব্য, অতি নিম্নমানের তদন্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দিল্লির পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে আদালত।
দিল্লির ওই দাঙ্গার সময় গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের উপরে অ্যাসিড, কাচের বোতল, ইট নিয়ে হামলা করার দায়ে আসরফ আলি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত কাল চার্জ গঠন করা হয় আদালতে। সে সময়েই অতিরিক্ত দায়রা জজ বিনোদ যাদব তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ওই মন্তব্য করে বলেন, ‘‘এটা খুবই বেদনাদায়ক যে, দাঙ্গা
সংক্রান্ত একটা বড় সংখ্যক মামলায় তদন্তের মান অতি খারাপ।’’ সেই সঙ্গেই বেশির ভাগ মামলায় তদন্তকারী অফিসারের আদালতে হাজির না হওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ
করেন তিনি।
একই সঙ্গে বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আধা খেঁচড়া চার্জশিট তৈরি করে তদন্তের যুক্তিসম্মত পর্যায়ে পৌঁছয় না পুলিশ। ফলে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে দিনের পর দিন জেলে থাকতে হচ্ছে।
বিচারকের কথায়, ‘‘এই মামলাটি এ সবের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। যেখানে পুলিশ কর্মীরা নিজেরাই আক্রান্ত, তবু তদন্তকারী অফিসার অ্যাসিডের নমুনা সংগ্রহ করে তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করার ব্যাপারো পরোয়াই করেননি। এমনকি আঘাতের প্রকৃতি নিয়ে মতামত সংগ্রহকেও গুরুত্ব দেননি।’’ সেই সঙ্গেই বিচারক তদন্তকারী অফিসারের কাজকর্ম নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্দেশের প্রতিলিপি দিল্লির পুলিশ
কমিশনারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। যাতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গার তদন্ত নিয়ে এর আগেও একাধিক ক্ষেত্রে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিভিন্ন আদালতের বিচারকেরা। ওই দাঙ্গা এবং তার তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আইনজীবী এবং নাগরিক সমাজের একাংশ বারবার অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, একে তো দাঙ্গা থামাতে গোড়ার দিকে সক্রিয়ই হয়নি দিল্লি পুলিশ। তার উপর দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এবং সমাজমাধ্যমে থাকা একাধিক প্রমাণ পুলিশকে দেওয়া হলেও অভিযুক্তদের সিংহ ভাগ শাসক বিজেপির নেতা-কর্মী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি অমিত শাহের পুলিশ। উল্টে প্রতিহিংসা দেখিয়ে পড়ুয়া-সমাজকর্মী এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধেই একের পর এক মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ফলে দিল্লি দাঙ্গার তদন্তে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। বিচারপতির মন্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলেই মনে করেন আইনজীবীদের একাংশ।