ছুটনি মাহাতো। ছবি: সংগৃহীত।
ডাইনি অপবাদের শিকার হয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেই অপবাদে তাঁকে খুন করার চেষ্টাও হয়েছিল। নিজে ডাইনি প্রথার শিকার হয়েও সামজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বাঁচিয়েছেন এমন বহু মহিলা এবং পুরুষকে। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই ‘যোদ্ধা’কে সোমবার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করল সরকার। তিনি ছুটনি মাহাতো।
ডাইনি প্রথা যে সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারণা, ডাইনি বলে যে কিছু হয় না, এটা একটা কুসংস্কার মাত্র— এই সচেতনতার বার্তা নিয়ে দিনরাত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন বছর বাষট্টির এই ছুটনি।
১৯৭৮-এ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীনই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। ছুটনি জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আসে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সময়টা ১৯৯৫। তাঁর গ্রামেরই একটি মেয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা তখন ছুটনিকেই এর জন্য দায়ী করেন। অভিযোগ তোলেন, তিনি কালাজাদু এবং মন্ত্রতন্ত্রের কাজ করেন। সেই অভিযোগ তুলেই ছুটনিকে কয়েক জন প্রতিবেশী ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতে বিষয়টি পৌঁছলে তাঁকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এই ঘটনার ঠিক ৬ মাস পরে গ্রামবাসীরা সেই একই অভিযোগ তুলে তাঁকে পিটিয়ে মারার চেষ্টা করে বলে দাবি ছুটনির।
তিনি বলেন, “নিজেকে বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম।” স্থানীয় এক আইনজীবীর বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য কাকুতি মিনতি করেও কোনও লাভ হয়নি। উপায় না দেখে সোজা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলে জানান ছুটনি। কিন্তু সেখানেও অভিজ্ঞতাটা খুব একটা সুখকর হয়নি তাঁর। থানা থেকে নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়, অভিযোগ দায়ের করতে হলে নগদ ১০ হাজার টাকা লাগবে!
এমন পরিস্থিতিতে যখন দিশাহারা অবস্থা, তখনই ‘ত্রাতা’ হিসেবে এগিয়ে আসেন এক আমলা নিধি খাড়ে। তিনিই ছুটনিকে একটি অসরকারি সংস্থা, যারা ঝাড়খণ্ডে এই ডাইনি প্রথা নিয়েই কাজ করছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। সেই থেকে তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু। যে ডাইনি প্রথার শিকার হয়েছিলেন নিজে, এ বার তার বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে নামলেন ছুটনি। গড়ে তোলেন ডাইনি প্রথা বিরোধী আলোচনা কেন্দ্র। সেখান থেকেই সমাজের নানা স্তরে এ নিয়ে বার্তা এবং সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেন তিনি। ছুটনি জানান, ডাইনি অপবাদ পাওয়া ১২৫ জনকে রক্ষা করেছেন তিনি।
তাঁর জীবন সংগ্রাম নিয়ে ১৯৯৬-তে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের ‘কালা সাচ- দ্য ডার্ক ট্রুথ’, এই বলিউড ছবিটিও তাঁর জীবনের উপর আধারিত।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র তথ্য বলছে, ২০০১ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ঝাড়খণ্ডে ৫৭৫ জন মহিলাকে ডাইনি অপবাদে পেটানো হয়েছে।