বাসে শাসক-বিধায়কদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
সরকার বাঁচাতে বিধায়কদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল ঝাড়খণ্ডের শাসক জোট। শনিবার দুপুরে বিধায়কদের নিয়ে তিনটি বাতানুকূল বাস রাঁচী ছাড়ে। কিন্তু বাসগুলি কোথায় যাচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিধায়করাও এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধায়কদের কংগ্রেস শাসিত ছত্তীশগঢ় কিংবা টিআরএস শাসিত তেলঙ্গানায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
এক কংগ্রেস বিধায়ক একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁদের খুব সম্ভবত ঝাড়খণ্ডের খুঁটী জেলার লতরাতুতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা রাঁচী থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। সেখানে শনিবারের রাতটুকু কাটিয়ে রবিবার সকালে তাঁরা সকলে ফিরে আসতে পারেন বলে দাবি করেছেন ওই কংগ্রেস বিধায়ক। কংগ্রেসের আর এক নেতা আলমগীর আলম আবার জানান, তাঁরা পিকনিক করার জন্য কাছেপিঠেই কোথাও যাচ্ছেন। শনিবার রাতেই তাঁরা ফিরে আসবেন বলে দাবি আলমগীরের।
এ দিকে কংগ্রেস শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় দলের সমস্ত বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দলের ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অবিনাশ পান্ডে।
শনিবারের সকালেই ইউপিএ জোট সরকারের সব বিধায়কদের নিজের বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। সেই সময়ই জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শাসক জোটের বিধায়কদের ছত্তীশগঢ় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সেই জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া হয় শাসক জোটের তরফ থেকে।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়কপদ থাকবে কি থাকবে না, তা এখন নির্ভর করছে সে রাজ্যের রাজ্যপাল রমেশ বইসের সিদ্ধান্তের উপর। তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, হেমন্তের বিধায়ক পদ খারিজের প্রস্তাব সম্বলিত চিঠি তাদের তরফে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের সরকার বাঁচাতে আলোচনায় বসেছে শাসক জোটের দলগুলি। ঝাড়খণ্ডে সরকার বাঁচানোর কৌশল রচনা করতে শুক্রবারও মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং অন্য দুই শরিক দল কংগ্রেস ও আরজেডির বিধায়করা। কংগ্রেস সূত্রে তখন খবর পাওয়া গিয়েছিল, শাসক জোটের বিধায়কদের কিছু দিনের জন্য পড়শি রাজ্য বিহার কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মতো ‘নিরাপদ’ রাজ্যের কোনও রিসর্টে রাখা হতে পারে। বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ, দু’টি রাজ্যেই বিজেপি বিরোধী দল ক্ষমতায় রয়েছে। তাই নিজেদের বিধায়কদের এই দু’টি রাজ্যের কোনও একটিতেই রাখার পরিকল্পনা করেছিল ঝাড়খণ্ডের শাসক জোট।
তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে হেমন্ত অবশ্য সম্প্রতি একটি জনসভায় বিজেপির দিকে ইঙ্গিত করে জানান, কিছু ‘অশুভ শক্তি’ গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে দিতে চাইছে। সেই জনসভায় প্রত্যয়ের সুরে হেমন্ত দাবি করেন, তিনি কোনও ভয় পাচ্ছেন না, কারণ জনসমর্থন তাঁর দিকে রয়েছে। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু অবধি তিনি লড়াই চালাবেন বলেও দাবি করেছেন।
হেমন্তের দল জেএমএম-ও অবশ্য এই বিষয়ে প্রত্যয়ী যে, ২০২৪ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তই থাকবেন। তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে তাঁর দল।
প্রসঙ্গত, নিজের নামে একটি খনির ইজারা নেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও জনপ্রতিনিধি লাভজনক কোনও কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না। বিজেপি এই বিষয়ে ফেব্রুয়ারি মাসেই রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। রাজ্যপাল এই বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতামত জানতে চাইলে তাদের তরফে হেমন্তের বিধায়ক পদ খারিজের প্রস্তাব করা হয়। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রাজ্যপালের হাতেই ন্যস্ত করে নির্বাচন কমিশন।
রাজ্যপাল অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, নৈতিকতার খাতিরেই হেমন্তের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত। ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, “বিধানসভা ভেঙে দিয়ে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়া উচিত এই সরকারের।” ৮১ আসনবিশিষ্ট ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় শাসক জোটের প্রধান শরিক জেএমএমের বিধায়ক সংখ্যা ৩০, কংগ্রেসের ১৮, আরজেডির ১। অন্য দিকে বিরোধী দল বিজেপির আসনসংখ্যা ২৬।