জয়ের খবর আসতেই বাবা শিবু সোরেনের পা ছুঁয়ে প্রণাম হেমন্তের (বাঁ দিকে)। জেএমএম সমর্থকদের উল্লাস (ডান দিকে উপরে ও নীচে)। ছবি: পিটিআই
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রঘুবর দাস। রাজ্যে বিজেপি বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর জোট। সোমবার, ভোট গণনার শুরু থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়েছিল। কিন্তু, বেলা যত গড়াতে থাকে ততই ভোটের ফলাফল জোট শিবিরের দিকেই ঝুঁকে পড়তে শুরু করে। আর তাতেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে যায় পালাবদলের ইঙ্গিত। ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় মোট আসন ৮১টি। সরকার গড়তে প্রয়োজন ৪১।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এবং ৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তারা। অন্য দিকে, কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। এগিয়ে রয়েছে ৪টিতে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ২৬টি আসনে জিতে গিয়েছে এবং ৪টি এগিয়ে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর ১টি আসনে জয় পেয়েছে।
এ দিন ফলাফল স্পষ্ট হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই জোট শিবিরের উল্লাসের ছবি দেখা গিয়েছে। কোথাও জেএমএম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মিষ্টিমুখ শুরু হয়ে যায়। আবার কোথাও বাজি পোড়াতে শুরু করেন কংগ্রেস ও জেএমএম সমর্থকরা। ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বুথফেরত সমীক্ষাগুলির বেশির ভাগই এ বার বিজেপির থেকে কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোটকেই এগিয়ে রেখেছিল। রাজ্যের একক গরিষ্ঠ দল হওয়ার পথে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত সোরেন। জয়ের পর রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হেমন্ত। পাশপাশি জোটসঙ্গীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এই আবহে রাজ্যপাল দৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে তাঁর ইস্তফাপত্র জমা দেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর। তিনি বলেন, ‘‘নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে কেয়ারটেকার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে থাকতে বলেছেন রাজ্যপাল।’’ বিজেপির হার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের আশা অনুযায়ী জনমত হয়নি। হেমন্ত সোরেনকে অভিনন্দন। আশা করি, নতুন সরকার উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই হারের পর্যালোচনা করা হবে।’’
২০০০ সালে গঠিত ঝাড়খণ্ড রাজ্য গত মাসেই ২০ বছরে পা দিয়েছে। এটি রাজ্যের চতুর্থ বিধানসভা নির্বাচন। এ দিন সকাল ৮টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গে জোট থেকে শিবসেনা সরে যাওয়ায় ক্ষমতা থেকেও সরতে হয়েছে বিজেপিকে। আয়তনে অনেক ছোট হলেও ঝাড়খণ্ডে শেষ পর্যন্ত ফলাফল কী হয় সে দিকে নজর রয়েছে গোটা দেশেরই।
• প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনের ছেলে নিজেও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এ বার ফের জিতেছেন তিনি। বারহাইত কেন্দ্র থেকে জয়ী ঘোষণা হয়েছেন তিনি।
• জামশেদপুর পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। কিন্তু এ বার তিনি হেরে গিয়েছেন।
• চক্রধরপুর কেন্দ্রে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি লক্ষণ গিলুয়া।
• ঝাড়খণ্ডের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বাবুলাল মারান্ডি। তখন ছিলেন বিজেপিতে। পরে দল ছেড়ে গঠন করেন ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা। এ বার ধনওয়ার কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন বাবুলাল মারান্ডি।
• বারহাইতের পাশাপাশি দুমকা থেকেও প্রার্থী হয়েছিলেন হেমন্ত সোরেন। এই কেন্দ্র থেকেও জিতেছেন তিনি।
• জামশেদপুর পূর্ব কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল প্রাক্তন অধ্যাপক গৌরব বল্লভকে। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি।
• লোহারদাগা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রামেশ্বর ওরাওঁ জয়ী হয়েছেন।
• রাজ্যের মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিধানসভার স্পিকার, ১৯৯৬ সাল থেকে রাঁচি কেন্দ্র থেকে টানা জিতে এসেছেন সি পি সিংহ। এ বারও ওই কেন্দ্রে সেই বিজেপি প্রার্থীর জয়ে ছেদ পড়েনি। তাঁর ভোটের ব্যবধান ৩০ হাজার ১৫০ ভোট।
• ১৯৯০ সাল থেকে শিকারিপাড়া কেন্দ্রে টানা বিধায়ক নলিন সোরেন এ বারও জিতেছেন। তিনি জেএমএম প্রার্থী ছিলেন।
• সিল্লি কেন্দ্র থেকে জিতেছেন সুদেশ মাহাতো। তিনি আজসুর প্রার্থী তথা দলের বর্তমান সভাপতি।
• চাইবাসা, চক্রধরপুর, ডুমরিতে এগিয়ে জেএমএম
• ঝাড়খণ্ডে জোট শিবিরকে টুইটে অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
• শিকারীপাড়া কেন্দ্রে জয়ী জেএমএম প্রার্থী নলিন সোরেন
• বাহারাগোরা কেন্দ্রে এগিয়ে জেএমএম। পিছিয়ে পড়েছেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সদ্য জেএমএম ছেড়ে যাওয়া কুণাল সারঙ্গী
• মধুপুরে এগিয়ে জেএমএম
• শরত বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি
• বোরিও ও জগসলাই কেন্দ্রে এগিয়ে জেএমএম
• ডাল্টনগঞ্জ ও কোডারমা কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি
• কোলেবিরা কেন্দ্রে এগিয়ে কংগ্রেস
• দেওঘরে এগিয়ে আরজেডি প্রার্থী
কংগ্রেস ও জেএমএম কর্মীদের মিষ্টিমুখ। ছবি: পিটিআই
• দেওঘর ছাড়াও গোড্ডা, ছতরপুর এবং চাতরা কেন্দ্রে এগিয়ে আরজেডি প্রার্থীরা
• বারহি কেন্দ্রে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী
• বোকারোয় এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী
রাঁচীতে কংগ্রেস ও জেএমএম কর্মীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই
• বিষ্ণুপুরে এগিয়ে জেএমএম প্রার্থী
• বরকাগাঁও কেন্দ্রে এগিয়ে কংগ্রেস
কাঁকের বিজেপি প্রার্থী সামারি লাল। ছবি: পিটিআই
• সিল্লি, মান্দার, নিরসা, সিমারিয়া ও লিট্টিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
• বোকারোর গুমিয়া কেন্দ্রে এগিয়ে আজসু
রাঁচিতে গণনাকেন্দ্রে জেভিএম প্রার্থী অন্তু তিরকে ও কংগ্রেস প্রার্থী রাজেশ কচ্ছপ। ছবি: পিটিআই
• পলামুতে এগিয়ে বিজেপি
• পাতালগারহি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি খুন্তিতে এগিয়ে বিজেপি
• জামশেদপুর পূর্ব কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী সরযূ রায়ের কাছে পিছিয়ে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস
• জামশেদপুর পশ্চিম কেন্দ্রে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী বান্না গুপ্তা
• জামশেদপুর পশ্চিম কেন্দ্রে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী বান্না গুপ্তা
• ৩০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দফায় ভোটগ্রহণ হয় ঝাড়খণ্ডে
বিদায়ী বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গত পাঁচ বছর রাজ্য শাসন করেছে বিজেপি। কিন্তু এ বারের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কংগ্রেস-আরজেডি জোট বেশি আসন পাবে বিজেপির থেকে। এমনকি বর্তমান বিরোধী জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে সমীক্ষার ইঙ্গিত।
২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল আজসু (অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন)। এ বার তারা আলাদা ভাবে লড়েছে। দলের সভাপতি সুদেশ মাহাতো বলে রেখেছেন, ভোটের পর পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁরা জোট এবং জোটসঙ্গীর কথা ভাববেন।
ফলাফল ত্রিশঙ্কুর দিকে গেলে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বাবুলাল মারাণ্ডির দল ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (জেভিএম)। বাবুলাল ঝাড়খণ্ডের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ২০০০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত তিনি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়েন। ২০১৪-র বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল আটটি আসন পেয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফল বেরোনোর মাসখানেকের মধ্যেই, ছয় জেভিএম বিধায়ক দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়ে দেন।
ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় মোট আসন ৮১। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বেরোনো ফলে বিজেপি জিতেছিল ৩৭ আসনে। জোটসঙ্গী আজসু পেয়েছিল পাঁচটি আসন। ম্যাজিক ফিগারের থেকে একটি আসন বেশি ছিল জোটের। কিন্তু ২০১৫-র গোড়াতেই জেভিএমের ছয় বিধায়ক বিজেপিতে চলে আসার পর, বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায় বিধানসভায়। ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসে সেই প্রথম, বিধানসভায় একা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় কোনও দল। এবং এই প্রথম কোনও একজন (রঘুবর দাস) টানা পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে থেকে মেয়াদ শেষ করলেন।
ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ফল ২০১৪
মোট আসন ৮১ • ম্যাজিক ফিগার ৪১
দল জোট
বিজেপি ৩৭ ৪২
আজসু ৫
জেএমএম ১৯ ২৫
কংগ্রেস ৬
জেভিএম ৮
অন্যান্য ৬
রাজ্য গঠনের পর থেকেই ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বারংবার ফিরে এসেছে। জোট ভেঙেছে। নতুন জোট হয়েছে বার বার। তিন বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে। ২০ বছরে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৬ জন। কেউ কেউ দু’বার। মোট ১০ বার শপথ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীদের। কিন্তু রঘুবরের আগে, কোনও মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর পর্যন্তও টিকে থাকতে পারেননি।